Tuesday, September 10, 2013

মন্দির নয়, আমাকে পুড়া


 
একটা রেপ-এর কি ক্ষতিপূরণ হতে পারে? ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর হিন্দু নিপীড়নে প্রায় ২০০ জন কে রেপ করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গোলাপী ঠোঁটের আলাপি ভাষনের আড়ালে যে এই খেলাপি ক্ষতিপূরণ অনেক দিন ধরে জমে আছে তা কবে পরিশোধিত হবে? যদি পরিশোধিত হয়ও তাহলে তার মূল্য কত? হ্যাঁ, আপনি একটি রেপ হওয়া মেয়েকে ক্ষতিপূরণ দিতেই পারেন। ক্ষতিপূরণ হতে পারে এমন যে তাকে প্রচন্ড ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে বা অস্ত্রপচারের মাধ্যমে তার স্মৃতিভ্রংশ ঘটাতে পারেন যেন সে কখনোই মনে করতে না পারে তার সাথে কি ঘটেছিলো।

পুড়ে যাওয়া মন্দিরে সরকার ক্ষতিপূরণ দিতে পারেন। আমার ভেঙ্গে যাওয়া মাটির মূর্তির বদলে হয়তোবা সোনা বা রূপার মূর্তিও দিতে পারেন কেউ কেউ। আমার দুই হাত লম্বা প্রতিমা হয়তো চার হাত হতে পারে তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক মাশুলে আর সারা বিশ্বও হয়তো দেখতে পারে তার উদ্বোধনী কার্যক্রম। কিন্তু যে দেশে মন্দির ভাঙ্গার শাস্তি হয়না সেখানে আপনি কতবার তা বানাবেন। মন্দির যত ভালোই হোক, প্রতিমা সোনা দিয়ে বাঁধানো হোক যদি আমি প্রতি মুহূর্তে শংকায় থাকি যে তা ভাঙ্গা হবে তাহলে এই বানানোতে লাভ কি? তবে কি ভাঙ্গার জন্যই নতুন করে বানানো হচ্ছে এগুলো? একটা মন্দির ভাঙ্গলে বিশ্বাস ভাঙ্গে, চেতনা ভাঙ্গে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটা সৌহার্দ্যের বোধ ভেঙ্গে যায়। একজন ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু তখন ভাবেনা কে ভালো মুসলমান, কে খারাপ মুসলমান। 'আমার মন্দির যারা ভেঙ্গেছে তারা সবাই মুসলমান'- এই বোধ তখন প্রবল হওয়াটাই কি স্বাভাবিক না? আপনি কি পারবেন কোন ক্ষতিপূরণে এই বোধ দূর করতে? মানুষ হত্যার বিচার হয়, ধর্ষনের বিচার হয়; কেউ কি আমাকে দেখাবেন যে এই দেশে মন্দির ভেঙ্গে কেউ আইনি শাস্তি পেয়েছে কিনা! যথাযথ বিচার না করে শুধুমাত্র ক্ষতিপূরনের এই বিধান/সমাধান কি পরোক্ষ ভাবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর প্রভাবক নয়? মনে করেন, আজ কেউ একজন প্রস্তাব করলো যে তারা খুব বিশ্রী ভাবে বায়তুল মোকাররম মসজিদ ভাঙ্গবে এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ তা নতুন করে বানানোর সমস্ত খরচ দেবে। তারপর আবার ভাঙ্গবে, আবার বানিয়ে দেবে; আপনি কি তা মানতে পারবেন কখনো? আমি জানি পারবেন না। হয়তো অনেকেই ইতোমধ্যে আমাকে গালি গালাজও শুরু করে দিয়েছেন। তাহলে আপনিই বলেন, যদি আপনারা না পারেন তাহলে আমরা কিভাবে পারি? মসজিদ-মন্দির ধর্মকে আলাদা করে কিন্তু তা সৃষ্টিকর্তাকে আলাদা করে কি? মহাত্মা গান্ধী-র কথাটা তো অনেকেই জানেন- "God has no religion"। সৃষ্টিকর্তা কি জল/পানি-র মতো নয়? আপনি যাকে পানি বলছেন, আমি তাকে জল বলি, একজন বিদেশী খৃস্টান/ইহুদি তাকে ওয়াটার বলে। আসলে কি সবগুলোই H2O এর নামান্তর না? এখন যদি আপনে বলেন যে না, যেহেতু আমরা ৯০ ভাগ মানুষ পানি বলি তাই যারা জল বলে তাদেরটা আসলে জল না, নোংরা জল। এক নদী আর এক মাটীর নিচ থেকে যা উঠে আসে তা আপনার ডাকে পরিস্কার আর আমার ডাকে নোংরা??

হিন্দুরা এই ধরনের ক্ষতি পূরণ চায়না। যেটা চায় তা হলো- বিচার। শক্ত বিচার। সমান বিচার। নিউটনের তৃতীয় সুত্রে বলে- " Every action has an equal & opposite reaction". বাংলাদেশের হিন্দুরা কিন্তু এই ধরনের ক্ষেত্রে তাদের 'Equal & Opposite reaction' দেখায় না। তাহলে কি বুঝে নিতে হবে যে এই রিএকশনের অভাবেই আসলে সমাজ/দেশ বুঝতে পারছেনা যে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, কতটুকু অন্যায় হচ্ছে, কতখানি অবিচার করা হচ্ছে? তাহলে কি সহনশীলতাই আমাদের সবচে' বড় দূর্বলতা? মনুষ্যত্ব আর অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধই কি আমার অস্তিত্ত্ব রক্ষার প্রধান অন্তরায়? 

No comments:

Post a Comment