Saturday, December 7, 2019

একাদশীতে শ্রাদ্ধ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

নারদীয় পুরাণ এবং অগ্নি পুরাণে সিদ্ধান্ত ঘােষণা করা হয়েছে যে - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, নারী, গৃহস্থ, ব্রহ্মচারী, অগ্নিহােত্রী, সন্ন্যাসী সকলেরই উভয় পক্ষীয় (শুক্ল + কৃষ্ণ) একাদশী পালন করা কর্তব্য। যারা মনে করেন কেবল বৈষ্ণবরাই একাদশী পালন করবে তাদের ভাবনা ঠিক নাই। একাদশী সকলেরই পালনীয়।

শুক্ল এবং কৃষ্ণ উভয় পক্ষীয় একাদশীতে ভােজন নিষিদ্ধ। তাই একাদশীতে সকল বর্ণের মানুষের জন্য শ্রাদ্ধ কার্য নিষিদ্ধ। একাদশীতে অন্ন ভােজন নিষিদ্ধ। আর অন্ন প্রদান ছাড়া শ্রাদ্ধ কার্য সম্পাদন হয় না। আবার একাদশীতে ব্রহ্মহত্যাদি পাপ অন্নকে আশ্রয় করে থাকে।

নারদীয় পুরানে আছে,
“যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদি কানি চ।
অন্নমাশ্ৰিত্য তিষ্ঠন্তি সম্প্রপ্তে হরিবাসরে”॥
(না. পু . ২১/৮)
“অর্থাৎ একাদশীতে শ্রাদ্ধ কার্য সম্পাদন করলে বা পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড প্রদান করলে সেই পিণ্ড ব্রহ্ম হত্যাদি পাপাশ্রয় করায় পিতৃপুরুষেরা পিণ্ড গ্রহন করেন না।

পদ্ম পুরাণে সে কথাই বলা হয়েছে -
“গহিতান্নং ন চাশ্নন্তি পিতরশ্চ দিবৌকসঃ”॥

অর্থাৎ পিতৃপুরুষেরা উপবাস দিনে ‘গহিতান্ন পাপ মিশ্রিত অন্ন গ্রহণ করেন না।

তাই পদ্মপুরাণ এবং হরিভক্তিবিলাস একই ঘােষণা দিয়েছেন,
“একাদশ্যাং যদা রাম শ্রাদ্ধং নৈমিত্তিকং ভবেৎ,।
তদ্দিনে তু পরিত্যজ্য দ্বাদশ্যাং শ্রাদ্ধমাচরয়েৎ”॥

“অর্থাৎ একাদশীতে শ্রাদ্ধ উপস্থিত হলে সেই দিন পরিত্যাগ পূর্বক ‘ তদ্দিনে তু পরিত্যজ্য ’ দ্বাদশী দিনে শ্রাদ্ধ করবে।”

তাই মাতা - পিতার মৃত্যুতে একাদশী তিথিতে কখনও শ্রাদ্ধ করবে না। দ্বাদশীতে শ্ৰাদ্ধ করবে। কারণ দেবতা এবং পিতৃপুরুষেরা একাদশী উপবাস দিনে পাপ আশ্রিত অন্ন গহিতান্ন গ্রহণ করেন না।

স্কন্ধ পুরাণ একধাপ এগিয়ে বলেছেন,

“একাদশী সদা নিত্যা শ্রাদ্ধং নৈমিত্তিকং ভবেৎ।
উপবাসং তদা কুৰ্য্যাদ্দাশ্যাং শ্রদ্ধমাচরেৎ”॥
(স্কন্দপুরাণ)
অর্থাৎ একাদশী নিত্য ব্রত। আর শ্রাদ্ধ নৈমিত্তিক অনুষ্ঠান মাত্র। অতএব সিদ্ধান্ত এই যে একাদশীতে উপবাস থেকে দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করা কর্তব্য।

প্রশ্ন হতে পারে যারা একাদশী পালন করে না, একাদশী উপবাস করে না, তাদের কি নিয়ম পালনীয় - এর উত্তর হচ্ছে সকলকে অবশ্যই একাদশী পালন করতেই হবে। যার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করা হবে তিনি যদি জীবদ্দশায় একাদশী পালন না করে থাকেন তবু তার শ্রাদ্ধকাৰ্য একাদশীতে করা যাবে না। এবং যারা পিণ্ডদানকারী তারাও যদি একাদশী পালন না করে থাকেন তা হলেও একাদশীতে শ্রাদ্ধ করা নিষিদ্ধ। উপবাস দিনে শ্রাদ্ধ করা নিষিদ্ধ। উপবাস বা একাদশী দিনে কখনও শ্রাদ্ধকার্য সম্পাদন করবে না।

হরিভক্তি বিলাস (১২/২৯) ঘােষণা করেছেন,

“যে কুর্বন্তি মহীপাল শ্রদ্ধং কোদশী দিনে।
এয়স্তে নরকং যান্তি দাতা ভােক্তা পরেতকঃ”॥

“অর্থাৎ একাদশী দিনে শ্রাদ্ধ করলে
১) দাতা - পিণ্ড দাতা পুত্ৰাদিগণ,
২) ভােক্তা শ্ৰাদ্ধ ক্রিয়া সম্পাদনকারী পুরােহিত ব্রাহ্মণ এবং
৩) পরলােকগত ব্যাক্তি উদ্দেশ্যে পিণ্ড প্রদান করা হচ্ছে - এই তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকেই নরকে যেতে হবে।

তাই একাদশী দিন, শ্রাদ্বাদি কর্ম থেকে বিরত হয়ে চব্বিশ ঘন্টা শ্রীহরির আরাধনা করুন। বেশী বেশী হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন।

“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে''

2 comments: