Friday, September 18, 2015

শ্রীকৃষ্ণের চরণাশ্রয়



এক গ্রামে স্বামী ও স্ত্রী দুইজন সুখ-স্বাচ্ছন্দে বাস করতে থাকে। তাদের একটি পুত্র সন্তান হয়। পুত্রটি প্রাণধন হিসেবে লালন পালন হতে তাকে। একদিন সকালবেলা এক বাঁদর খেলোয়াড় দুইটি বাঁদর নিয়ে খেলা দেখিয়ে পয়সা উপার্জন করতে যাচ্ছে। ভদ্রলোক বাঁদরওয়ালাকে ডেকে বললেন-“ভাই! তুমি প্রতিদিন খেলা দেখিতে কত করে টাকা পাও? বাঁদরওয়ালা বলল- “কুড়ি, পঁচিশ টাকা হয়। ভদ্রলোক বললেন- “এসো, আমাদের ছেলেকে তুমি সারাদিন খেলা দেখাবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তোমার মজুরি নিয়ে চলে যাবে।” ভদ্রলোকের কথামতো লোকটি বাঁদর নিয়ে বাড়িতে ঢুকল। বাঁদর দেখে ছেলেটির খুব আনন্দ হল। লোকটি খেলা দেখাতে আরম্ভ করল।
ছেলেটি বাঁদর দেখে ছুটে এল এবং সারাদিন বাঁদরের সঙ্গে খেলতে লাগল। এইভাবে খেলতে খেলতে সন্ধ্যা হয়ে আসলে বাঁদরওয়ালা তার মজুরী নিয়ে চলে গেল। তারপর পরিশ্রান্ত ছেলেকে মা স্নান করিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। খাওয়ার পর ছেলেটি বিশ্রাম করল। পরে স্বামী-স্ত্রী দুইজন খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম করলেন। রাত যখন দুটো, সেই সময় ছেলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ছেলেটি কান্না শুরু করে এক বায়না ধরল,-“আমি বাঁদর খেলা দেখব।” তার মা যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য। কিন্তু সে শান্ত হচ্ছে না দেখে স্বামীকে ডাকলেন-“ ও গো! দেখ গো! তোমার ছেলের অবস্থা দেখ। ও গো! ওঠো না গো। ছেলেটি কি কান্নাই না কাঁদছে। দম আটকে গেলে তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না?” তখন তার বাবা উঠে মাকে বললেন- “ওগো! তুমি তো মা। তুমি ওকে শান্ত করতে না পারলে আমি কি করব?” ছেলেটির মা বললেন- “ওগো! তুমি ওঠো না গো। ছেলেকে দেখ না গো।” ভদ্রলোক বললেন- “ও কি বলছে” ওর মা বললেন,- “এখনও বাঁদর খেলা দেখবে।” ভদ্রলোক বললেন- “মহা মুশকিল। এই রাত্রিতে তোমাকে কোথা থেকে বাঁদর খেলা দেখাব। কাল সকালে তোমাকে বাঁদর খেলা দেখাব।” কিন্তু ছেলেটি কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। ভদ্রলোকের স্ত্রী বললেন-“ওগো, তুমি বাঁদর সাজো না। তোমায় গলায় দড়ি দিয়ে আমি লাঠি দেখাব। আর তুমি খেলবে। তাহলে ছেলে নিশ্চয়ই চুপ করবে। ভদ্রলোক মনে করলেন-“বাঃ এই কথাটিই ঠিক”- ভেবে নিয়ে স্ত্রীর কথায় তিনি বাঁদরের মতো সাজলেন। ভদ্রমহিলা তার গলায় দড়ি দিয়ে লাঠি দেখাতে লাগলেন এবং ভদ্রলোক বাঁদরের মতো চেয়ার-টেবিলের উপর লাফিয়ে খেলা দেখাতে লাগলেন। এই দৃশ্য দেখে মহানন্দে ছেলেটি হাততালি দিয়ে হাসতে লাগল।
। হিতোপদেশ।
“কৃষ্ণ বহির্মুখ হইয়া ভোগবাঞ্ছা করে।
নিকটস্থ মায়া তারা জাপটিয়া ধরে।।
পিশাচী পাইলে যেন মতিচ্ছন্ন হয়।
মায়াগ্রস্থ জীবের হয় সে ভাব উদয়।।

এই জগতে জীবসকল মায়ায় আবদ্ধ হয়ে মায়ার দাসত্ব করে চলেছে। অন্যের অসৎ কথায় কোন বিচার না করে মেনে নিয়ে সুদুর্লভ জীবনকে নষ্ট করতে বসেছে। আমরা মদখোরের কথা মতো মদখোর হতে পারি, গাঁজাখোরের কথা শুনে গাঁজাখোর হতে পারি, চোরের কথা শুনে চুরি করতে পারি, স্ত্রীর কথা শুনে বাঁদর সাজতে পারি, কিন্তু এমনই দুর্দ্দৈব যে, সাধুর কথায় আমরা সৎ পথ অবলম্বন করে সাধু হতে পারি না?

No comments:

Post a Comment