বাঙালি হিন্দু বিবাহ বলতে বোঝায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বসবাসকারী বাঙালি হিন্দুদের নিজস্ব বিবাহ-সংক্রান্ত প্রথা ও রীতিনীতি। হিন্দু সমাজের বিবাহে প্রধানত দুইটি আচারগত বিভাগ লক্ষিত হয়। যথা, বৈদিক ও লৌকিক। লৌকিক আচারগুলি স্ত্রী আচার নামে পরিচিত। বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অবশ্য পালনীয় প্রথাগুলি হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম, সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ, ধৃতিহোম ও চতুর্থী হোম। বৈদিক আচারগুলির সঙ্গে লৌকিক আচারগুলির কোনো সম্পর্ক নেই। লৌকিক আচারগুলি অঞ্চল, বর্ণ বা উপবর্ণভেদে এক এক প্রকার হয়। নিম্নবর্ণীয় হিন্দুদের মধ্যে লৌকিক আচার তো বটেই বিবাহের মৌলিক আচারগুলির ক্ষেত্রেও সম্প্রদায়ভেদে পার্থক্য লক্ষিত হয়।
অতীতে বাঙালি হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহের ব্যাপক প্রচলন ছিল। বর্তমানে বাল্যবিবাহ আইনত নিষিদ্ধ। বর্তমান কালে পরিণত বয়সেই বিবাহ প্রথা প্রচলিত।
বিবাহ অনুষ্ঠান বাঙালি ব্রাহ্মণ সমাজে পাঁচটি শাখা রয়েছে — রাঢ়ী, বারেন্দ্র, বৈদিক, সপ্তশতী ও মধ্যশ্রেণী। বাঙালি কায়স্থ সমাজে রয়েছে চারটি শাখা — উত্তর রাঢ়ী, দক্ষিণ রাঢ়ী, বারেন্দ্র ও বঙ্গজ। এই সকল বর্ণ এবং তাদের শাখা ও উপশাখাগুলির মধ্যে বিবাহ প্রথায় দুটি বিভাগ দেখা যায় — বৈদিক ও লৌকিক। লৌকিক প্রথাগুলি মেয়েলি আচার। এই কারণে এগুলি ‘স্ত্রী আচার’ নামে পরিচিত। বৈদিক আচারে সাম, যজুঃ ও ঋক্ বেদত্রয়ের অনুসরণকারী ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহ প্রথায় আবার সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। হিন্দু বিবাহের বৈদিক আচারগুলির মধ্যে অপরিহার্য হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম (লাজ বা খই দিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান), সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ (কন্যার পাণি অর্থাৎ হস্ত গ্রহণ), ধৃতিহোম (ধারণ করার অর্থাৎ কন্যাকে ধরে রাখার যজ্ঞ) ও চতুর্থী হোম। এছাড়া পালিত হয় অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন, ধ্রুব নক্ষত্র দর্শন, শিলারোহণ ইত্যাদি কয়েকটি বৈদিক প্রথাও।বৈদিক প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় প্রথা ও বিবাহের মূল অঙ্গ। বাঙালি হিন্দু বিবাহের লৌকিক আচার বহুবিধ। এই প্রথাগুলি বর্ণ, শাখা, উপশাখা এবং অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হয়। এগুলির সঙ্গে বৈদিক প্রথাগুলির কোনো যোগ নেই।
পাটিপত্র
পাটিপত্র বাঙালি হিন্দু বিবাহের প্রথম আচার। এই আচার লগ্নপত্র বা মঙ্গলাচরণ নামেও পরিচিত। ঘটকের মাধ্যমে সম্বন্ধ করে বিবাহ স্থির হলে নগদ বা গহনাপত্র ও অন্যান্য দেনাপাওনা চূড়ান্তভাবে স্থির করার জন্য যে অনুষ্ঠান হয়, তাকেই পাটিপত্র বলে। এই আচারের মাধ্যমেই বিবাহের অন্যান্য আচারের সূচনা ঘটে।
পাটিপত্র বাঙালি হিন্দু বিবাহের প্রথম আচার। এই আচার লগ্নপত্র বা মঙ্গলাচরণ নামেও পরিচিত। ঘটকের মাধ্যমে সম্বন্ধ করে বিবাহ স্থির হলে নগদ বা গহনাপত্র ও অন্যান্য দেনাপাওনা চূড়ান্তভাবে স্থির করার জন্য যে অনুষ্ঠান হয়, তাকেই পাটিপত্র বলে। এই আচারের মাধ্যমেই বিবাহের অন্যান্য আচারের সূচনা ঘটে।
পানখিল
পানখিল বাঙালি হিন্দু বিবাহের দ্বিতীয় আচার। এটি পাটিপত্রের ঠিক পরেই পালিত হয়। পানখিলের অর্থ পান পাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে খিল দেওয়া বা খড়কে বেঁধানো। এই আচারটি প্রথমে বরের বাড়িতে এবং পরে কনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পানখিল আচারে বাড়ির মেয়েরা এবং প্রতিবেশিনীরা ‘বিয়ের গান’ গেয়ে থাকেন। এই গানের বিষয়বস্তু হল রাম ও সীতার বিবাহ।
পানখিল বাঙালি হিন্দু বিবাহের দ্বিতীয় আচার। এটি পাটিপত্রের ঠিক পরেই পালিত হয়। পানখিলের অর্থ পান পাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে খিল দেওয়া বা খড়কে বেঁধানো। এই আচারটি প্রথমে বরের বাড়িতে এবং পরে কনের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। পানখিল আচারে বাড়ির মেয়েরা এবং প্রতিবেশিনীরা ‘বিয়ের গান’ গেয়ে থাকেন। এই গানের বিষয়বস্তু হল রাম ও সীতার বিবাহ।
দধি মঙ্গল→
বিবাহের দিন বর ও কন্যার উপবাস। তবে উপবাস নির্জলা নয়। জল মিষ্টি খাওয়ার বিধান আছে। তাই সারাদিনের জন্য সূর্য্যোদয়ের আগে বর ও কন্যাকে চিড়ে ও দৈ খাওয়ানো হয়।
বিবাহের দিন বর ও কন্যার উপবাস। তবে উপবাস নির্জলা নয়। জল মিষ্টি খাওয়ার বিধান আছে। তাই সারাদিনের জন্য সূর্য্যোদয়ের আগে বর ও কন্যাকে চিড়ে ও দৈ খাওয়ানো হয়।
গায়ে হলুদ:
সংস্কৃত ভাষায় এই রীতিকে বলা হয় গাত্রহরিদ্রা। হিন্দু ধর্মে কয়েকটি জিনিসকে শুভ বলা হয়। যেমন শঙ্খধ্বনি, হলুদ ইত্যাদি। প্রথমে বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে হলুদ মাখানো হয়। পরে সেই হলুদ কন্যার বাড়ী পাঠানো হয়। কন্যাকে সেই হলুদ মাখানো হয়।
সংস্কৃত ভাষায় এই রীতিকে বলা হয় গাত্রহরিদ্রা। হিন্দু ধর্মে কয়েকটি জিনিসকে শুভ বলা হয়। যেমন শঙ্খধ্বনি, হলুদ ইত্যাদি। প্রথমে বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে হলুদ মাখানো হয়। পরে সেই হলুদ কন্যার বাড়ী পাঠানো হয়। কন্যাকে সেই হলুদ মাখানো হয়।
শঙ্খ কঙ্কন:
কন্যাকে শাখা পরানো হয়। এরপর বিকালে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়
কন্যাকে শাখা পরানো হয়। এরপর বিকালে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়
বর বরণ:
বর বিবাহ করতে এলে তাকে স্বাগত জানান কন্যাপক্ষ। সাধাবনত: কন্যার মা তার জামাতাকে একটি থালায় প্রদীপ, ধান দুর্ব্ব ও অন্যান্য কিছু বরণ সামগ্রী নিয়ে বরণ করেন। এরপর বরকে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় ও দুধ এবং মিষ্টি খাওয়ানো হয় ।
বর বিবাহ করতে এলে তাকে স্বাগত জানান কন্যাপক্ষ। সাধাবনত: কন্যার মা তার জামাতাকে একটি থালায় প্রদীপ, ধান দুর্ব্ব ও অন্যান্য কিছু বরণ সামগ্রী নিয়ে বরণ করেন। এরপর বরকে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় ও দুধ এবং মিষ্টি খাওয়ানো হয় ।
সাত পাক:
বিবাহের মন্ডপে প্রথমে বরকে আনা হয়। এরপর কন্যাকে পিঁড়িতে বসিয়ে আনা হয়। সাধারণত: কন্যার জামাইবাবুরা পিঁড়ি ধরে থাকেন। কন্যা পান পাতা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রাখেন। কন্যাকে পিঁড়িতে করে বরের চারপাশে সাতপাক ঘোরানো হয়।
বিবাহের মন্ডপে প্রথমে বরকে আনা হয়। এরপর কন্যাকে পিঁড়িতে বসিয়ে আনা হয়। সাধারণত: কন্যার জামাইবাবুরা পিঁড়ি ধরে থাকেন। কন্যা পান পাতা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রাখেন। কন্যাকে পিঁড়িতে করে বরের চারপাশে সাতপাক ঘোরানো হয়।
শুভদৃষ্টি:
বিবাহের মন্ডপে জনসমক্ষে বর ও কন্যা একে অপরের দিকে চেয়ে দেখেন।
বিবাহের মন্ডপে জনসমক্ষে বর ও কন্যা একে অপরের দিকে চেয়ে দেখেন।
মালা বদল:
কন্যা ও বর মালাবদল করেন। এই রীতির অর্থ হচ্ছে দুজন একে অন্যকে জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নিলেন।
কন্যা ও বর মালাবদল করেন। এই রীতির অর্থ হচ্ছে দুজন একে অন্যকে জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নিলেন।
সম্প্রদান:
কন্যার পিতা কন্যাকে জামাতার হাতে সম্প্রদান করেন বেদমন্ত্রে। বরও জানান যে তিনি কন্যার ভরন পোষনের দ্বায়িত্ব নিলেন।
কন্যার পিতা কন্যাকে জামাতার হাতে সম্প্রদান করেন বেদমন্ত্রে। বরও জানান যে তিনি কন্যার ভরন পোষনের দ্বায়িত্ব নিলেন।
বিবাহের মন্ত্র হলো
যদিদং হৃদয়ং তব,
তদিদং হৃদয়ং মম।
যদিদং হৃদয়ং তব,
তদিদং হৃদয়ং মম।
অঞ্জলি:
কন্যা ও বর খৈ অগ্নাহুতি দেন। প্রচলিত বাংলায় একে বলে খৈ পোড়া। বৈদিক যুগে মানুষ নানা ধরনের শক্তির উপাসনা করতেন। অগ্নিও তাদের মধ্যে অন্যতম।
কন্যা ও বর খৈ অগ্নাহুতি দেন। প্রচলিত বাংলায় একে বলে খৈ পোড়া। বৈদিক যুগে মানুষ নানা ধরনের শক্তির উপাসনা করতেন। অগ্নিও তাদের মধ্যে অন্যতম।
সিঁদুর দান:
বিবাহের শেষ রীতি হল বর কন্যার কপালে সিঁদুর লেপন করেন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পরেন। জাতিভেদে ও অঞ্চলভেদে এই রীতি কিছু পরিবর্তিত হয়।
বিবাহের শেষ রীতি হল বর কন্যার কপালে সিঁদুর লেপন করেন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় সিঁদুর পরেন। জাতিভেদে ও অঞ্চলভেদে এই রীতি কিছু পরিবর্তিত হয়।
No comments:
Post a Comment