Tuesday, September 10, 2013

শঙ্খ বিষয়ে একটি বিশেষ আলোচনা

শঙ্খ বিষয়ে একটি বিশেষ আলোচনা
(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শ্লোক ১:১৫ এবং ১:১৬ এর পর):

উপরোক্ত দুটি শ্লোকে মোট ছয়টি বিভিন্ন শঙ্খের নাম করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের শঙ্খ পাঞ্চজন্য, অর্জুনের দেবদত্ত, ভীমের পৌন্ড্র, মহারাজ যুধিষ্ঠিরের অনন্তবিজয়, নকুলের সুঘোষ এবং সহদেবের মণিপুষ্পক। এছাড়া ভীষ্মদি বিভিন্ন কৌরব এবং পাণ্ডব মহারথীগণ তাদের নিজ নিজ শঙ্খধ্বনি করলেন।

শঙ্খ একটি পবিত্র বস্তু, প্রতিটি গৃহস্থে মঙ্গলকর এবং অশুভনাশের জন্য নিয়মিত শঙ্খধ্বনি করা উচিত। মঙ্গলাচরণে শঙ্খধ্বনি সুপ্রাচীন বৈদিক প্রথা। বস্তুত, শঙ্খ একটি মৃত সামুদ্রিক জীবের খোলা। বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর তথা পৃথিবীর অন্যান্য সাগর মহাসাগরেও বিভিন্ন প্রজাতির শঙ্খ পাওয়া যায়। সাধারণ গৃহস্থে ব্যবহৃত শঙ্খ ছাড়াও গণেশ শঙ্খ, গোমুখ শঙ্খ, কৌড়ি শঙ্খ বিশেষ মঙ্গলশঙ্খ হিসাবে প্রসিদ্ধ। এই শঙ্খসমূহ শ্রীবিষ্ণুর বিগ্রহে স্থান দিয়ে শ্রীবিষ্ণুস্বরূপে নিত্যপূজায় গৃহস্থের কল্যাণ হয়। এই শঙ্খসমূহ বামাবর্তী শঙ্খ, অর্থাত্‍ শঙ্খসমূহের ঘূর্ণন বামদিকে। এছাড়া দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ (অর্থাত্‍ এর ঘূর্ণন ডানদিকে) বা ভালামপুরী শঙ্খ অত্যধিক শুভ শঙ্খ হিসাবে পূজিত হয়।

মূলত, এই দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ বা ভালামপুরী শঙ্খই  হল, শ্রীবিষ্ণুর পাঞ্চজন্য। এটি অত্যন্ত দুর্লভ, কেবল মাত্র মায়ানমার তট থেকে শ্রীলঙ্কা উপকূল পর্যন্ত ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে কোটিতে গুটিক পাওয়া যায়। একটি প্রমাণ মাপের দক্ষিণাবর্তী শঙ্খের (২৫০-৩০০ গ্রাম) বাজার মূল্য দুই লক্ষ ভারতীয় টাকার কাছাকাছি। বিভিন্ন সংস্থা দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় দক্ষিণাবর্তী শঙ্খের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে সেটি তুলনামূলক সহজলভ্য অপর একটি প্রজাতির সাধারণ শঙ্খ। 

পাঞ্চজন্য ব্যতিরেকে অপরাপর যে শঙ্খগুলির নাম দেওয়া হয়েছে সেগুলির প্রজাতি বিশেষ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু পাই নি। তবে, অধ্যাপক এইচ॰ এইচ॰ উইলসন (H. H. Wilson, 1786-1860) ভারততত্ববিদ ও সংস্কৃত সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন এবং ম্যাক্সমুলার বা মেকুলির মতোই একজন উন্নাসিক ব্যক্তি ছিলেন যিনি বিশ্বাস করতেন পাশ্চাত্যের গো-মাংস সুরাময় কেরেস্তানি সভ্যতা ভারতীয় বৈদিক অন্ধকারময় (!) সভ্যতায় নতুন আলো নিয়ে আসবে। এমনকী ভারতীয় বৈদিক শাস্ত্রের ভুল খুজে বের করার জন্য তত্‍কালীন দু’শ পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু তার আগেই দীর্ঘজীবী এই ব্যক্তি মৃত্যুর পরমসত্যে পৌছে যান। যাই হোক, ইনি কিছু কিছু বৈদিক গ্রন্থাদিও পাঠ করেন, তার মধ্যে গীতার এই আলোচ্য শ্লোকটি দুটিও তিনি পাঠ করে শঙ্খসমূহের বিষয়ে গবেষণা করেন। সাধু প্রচেষ্টা, এবং সারা পৃথিবী খুজে তিনি আমেরিকার ফ্লোরিডা উপকূলে সহজলভ্য Gigantea, Theodotes, Arundinca, Triumpphatrix, Dulcisona এবং Gemmiflora, এই ছয়টি শঙ্খই যথাক্রমে পাঞ্চজন্য, দেবদত্ত, পৌন্ড্র, অনন্তবিজয়, সুঘোষ এবং মণিপুষ্পক, এই বিষয়ে নিশ্চিত (!) হন। ধন্য প্রফেসর উইলসন, ধন্য আপনার গবেষণা। আর এটুকু জেনে ধন্য হলাম আমি যে মহাভারতের কালে আপনাদের মত বণিক শ্রেণী ফ্লোরিডা থেকে শঙ্খ এনে এনে আমাদের বিক্রি করেছেন।
(সঙ্গের ছবি: ১. আসল পাঞ্চজন্য শঙ্খ। ২. বাজার চলতি দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ। ৩. শালগ্রাম, তুলসীর সঙ্গে পাঞ্চজন্য শঙ্খ।)
(সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment