Tuesday, September 10, 2013

অর্জনে কেমন ছিলেন

 SRI ARJUN FRIEND OF KRISHNA


নিজের ধনুর্বিদ্যার ওপরে খুব গর্ব ছিল অর্জুনের। একদিন এক নদীর ধারে গাণ্ডীবধারী অর্জুনের সঙ্গে এক বৃদ্ধ বানরের সাক্ষাত্‍ হয়। অর্জুন তার পরিচয় জানতে চাইলে বৃদ্ধ বানর জবাব দেন, “আমি শ্রীরামচন্দ্রের সেবক হনুমান।”
অর্জুন বলেন, “আপনার প্রভু শ্রীরামচন্দ্র কেমন বীর ছিলেন যে নিজে সমুদ্রের উপরে একটা সেতু নির্মাণ করতে না পেরে আপনাদের মতো বানরদের সহায়তা নিয়েছিলেন? যদি রামের স্থানে আমি থাকতাম, তাহলে আমি কেবলমাত্র তীর দিয়ে নিমেষের মধ্যে সমুদ্রের উপরে সেতু নির্মাণ করে ফেলতাম।”
জবাবে হনুমান বললেন, “আপনি তীর দিয়ে সমুদ্রের উপরে সেতু নির্মাণ করলে সেই সেতুর ওপর দিয়ে সুগ্রীবের বানরসেনার দুর্বলতম সেনাটিও সমুদ্র পার করতে পারতো না, সেতু নির্ঘাত ভেঙে পড়তো।”
“বটে?” ক্রুদ্ধ অর্জুন বলেন, “তাহলে আমি এই নদীর উপরে একটা ছোট্ট পুল নির্মাণ করছি। তুমি তো শুনেছি মহাবীর, তুমিই ভেঙে দেখাও দেখি আমার পুল।” এই বলে অর্জুন তার গাণ্ডীব থেকে তীর নিক্ষেপ করে নিমেষের মধ্যে নদীর উপরে একটি পুল নির্মাণ করে ফেললেন।
হনুমান তাই দেখে নিজের শরীরটাকে হিমালয় প্রমাণ বড় করে পুলের উপরে দিলেন এক লাফ। কিন্তু এ কী? পুলের তো কিছুই হয় না। হনুমানতো চোখ বন্ধ করে শ্রীরামকে স্মরণ করে বললেন, “হে প্রভু, আপনার ভক্তের মান রাখুন প্রভু।”
হনুমান চোখ বন্ধ করে শ্রীরামকে স্মরণ করে পুলে একটু চাপ দিতেই পুল কাঁপতে শুরু করল, পুলের তখন এই ভাঙে, সেই ভাঙে অবস্থা। তাই দেখে অর্জুন ভাবে আজ তার দর্পচূর্ণ হতে চলেছে। অর্জুন তখন কৃষ্ণকে স্মরণ করেন, “হে শ্রীকৃষ্ণ, তোমার পরম সখার মান সম্মান আজ বোধ হয় শেষ হতে চলেছে। এখন তুমিই রক্ষা কর্তা।”
এদিকে হনুমান দেখে পুল তো ভাঙো ভাঙো হয়েও ভাঙে না। ব্যাপার কী দেখার জন্য হনুমান পুলের নিচে তাকিয়ে দেখেন স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র পুলের উপরে পিঠ ঠেকিয়ে পুল রক্ষা করছেন আর তীরের বর্শা তার শরীরময় বিঁধে, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত নদীর জলে মিশে নদীর জলকে করে তুলেছে লাল। বিস্ময়াবিষ্ট হনুমান করজোড়ে বলেন, “এ আপনি কী করেন প্রভু?”
ভগবান শ্রীরামচন্দ্র বলেন, “হনুমান, তুমিও আমার পরম ভক্ত, অর্জুনও আমার পরম ভক্ত। আমিই মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম, আমিই লীলা পুরুষোত্তম কৃষ্ণ। তুমি আমার স্বরূপ সম্পর্কে সম্যক জানো, কিন্তু অর্জুন জানে না। তাই তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো, কিন্তু অর্জুন পাচ্ছে না। ভক্তের মধ্যে যদি ঝগড়া হয়, তাহলে প্রভুই ব্যাথা পায়। তোমাদের দুই জনের এই সম্মানের লড়াইয়ে আমারই শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।”
হনুমান করজোড়ে বলেন, “হে প্রভু! আমার অপরাধ ক্ষমা করুন।” এই বলে পুল থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার ভক্ত অর্জুন আপনার স্বরূপ সম্পর্কে কখন জানবে?”
শ্রীরামচন্দ্র বললেন, “আগামী কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আমি আমার বিরাট রূপ নিয়ে অর্জুনকে দর্শন দেব। হে আমার পরম ভক্ত হনুমান, তুমি আজ থেকে আমার অপর ভক্ত অর্জুনের রথে অবস্থান কর এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধেও তুমি আমার সঙ্গে অবস্থান করে অর্জুনকে সমস্ত ভাবে রক্ষা করবে।” 
শ্রীরামচন্দ্রের আদেশে হনুমান (কপি) অর্জুনের রথের পতাকায় অবস্থান করলেন, তাই অর্জুনের নাম হল কপিধ্বজ। হরে কৃষ্ণ।
(সমাপ্ত)
(সঙ্গের ছবি: সেতুবন্ধনে শ্রীরামচন্দ্র ও বানরসেনা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের হাতে একটি ক্ষুদ্রকায় কাঠবিড়ালি। রামায়ণের উপাখ্যানে পাই, এই ক্ষুদ্রকায় কাঠবিড়ালি সমুদ্র জলে ডুব দিচ্ছিল, আবার তীরে উঠে সারা শরীরে সমুদ্র তীরের বালি মেখে সেতু বন্ধনের স্থানে গিয়ে ডুব দিয়ে গায়ে লেগে থাকা সামান্য পরিমাণ বালি দিয়ে বিশাল সমুদ্র ভরাট করার অক্লান্ত চেষ্টায় নিয়োজিত রেখেছিল। এই ক্ষুদ্র প্রাণিটির মহত্বকে মর্যাদা দিয়ে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র তার পদ্মহস্ত পিঠে বুলিয়ে দিলেন। সেই থেকে কাঠবিড়ালির পিঠে শ্রীরামচন্দ্রের দেওয়া তিন আঙ্গুলের দাগ দেখা যায়।)

No comments:

Post a Comment