বই ছাড়া অন্য যেখানে আমরা শ্রীকৃষ্ণ নাম খুঁজে পাই.......................................
“মহাভারতের বাইরে আমরা কৃষ্ণ নামে অন্তত চারটি চরিত্রের সন্ধান পাই। এদের মধ্যে একজন ঋকবেদের ঋষি কৃষ্ণ, আবার ঋকবেদেই আরেকজন অসুর এর উল্লেখ আছে যার নামও কৃষ্ণ। এই অসুর কৃষ্ণ অংশুমতী নদীর তীরে দশ সহস্র সৈন্য নিয়ে আর্যদের অগ্রগতিতে বাধা দিলে ইন্দ্র তার ‘কৃষ্ণত্ব উন্মোচন করে’ (গায়ের চামড়া তুলে নিয়ে?) তাকে বধ করে তার দেহ পুড়িয়ে ফেলেন এবং তার গর্ভবতী পত্নীদের হত্যা করেন।
প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থ ললিত বিস্তর-এও একজন অসুর কৃষ্ণের সামান্য উল্লেখ আছে, কিন্তু সেই কৃষ্ণই ঋকবেদে অসুর কিনা তা বলা সম্ভব নয়। এক তৃতীয় দেবকী পুত্র কৃষ্ণের উল্লেখ আছে ছান্দোগ্য উপনিষদে। এই কৃষ্ণ ছিলেন ঘোড় অঙ্গিরস নামক এক সূর্য উপাসক (সম্ভবত প্রাচীন ভগবত অবলম্বী) পুরোহিতের শিষ্য। বিশ্বাসীরা সাধারণত অপর এক চতুর্থ কৃষ্ণের সঙ্গেই মহাভারত এর কৃষ্ণকে অভিন্ন বলে প্রচার করে থাকে । ইনি বালক কৃষ্ণ, আর পৌরাণিক যুগে এই বালক কৃষ্ণ রাখাল বালক বা গোপালক বা গোপাল। কিন্তু এই কৃষ্ণকে মহাভারতে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাকে পাওয়া যায় বিষ্ণুপুরাণ, হরিবংশ, ব্রাহ্মবৈবর্তপুরাণ, জয়দেব গোস্বামীর গীতগোবিন্দ এবং ভাগবত পুরাণে।
এই গুলি সবই প্রথম পর্যায়ের মহাভারতের অনেক পরের লেখা। মহাভারতের কোথাও রাধা নামের উল্লেখ নেই। অতএব এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে মথুরা বৃন্দাবনের দেবকীপুত্র গোপালকৃষ্ণ মোটেই মহাভারতের কৃষ্ণ নন দুই কৃষ্ণের একীকরণ সাধিত হয় শুধু মাত্র অবতার কৃষ্ণের অবতারসুলভ বাল্য জীবন সৃষ্টির প্রয়োজনে। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রবক্তা সুচতুর ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্য সাধক কলমের গুণে”
শ্রীভগবান ও শ্রীকৃষ্ণ এক ননঃ “ভগবদ্গীতার নায়কের নাম শ্রীভগবান, শ্রীকৃষ্ণ নয়। ব্রাহ্মণ্যধর্মের গভীর অসাম্য ভিত্তিক এবং অমানবিক অনুশাসনগুলোকে ঐশ্বরীর মহিমায় মহিমান্বিত করে অশিক্ষিত এবং নিপীড়িত জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের উদ্দেশ্যই চতুর ব্রাহ্মণেরা এই কাল্পনিক শ্রীভগবান চরিত্র সৃষ্টি করেছিলেন।
সুত্রঃ জয়ন্তানুজ বন্দোপাধ্যায় মহাকাব্য ও লৌলবাদঃ প্রবন্ধঃ মহাভারতের —কৃষ্ণ, এলাইড পাবলিশার্সঃ কলকাতাঃ ১৯৯৬। পৃঃ ৭৯-৮১, ৮৯।
No comments:
Post a Comment