কর্ম কিভাবে পূজায় পরিণত হতে পারে জানতে হলে এখানে আসুন।..........
নিম্নোক্ত কথোপকথনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং তার কিছু শিষ্যের মধ্যে ১৯৭৪ সালের জুন মাসে, জেনিভাতে, খুব ভোরে প্রাত:ভ্রমণের সময়।
ভক্ত: ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে আমাদের নিষ্কাম হতে হবে; একথার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ কি বুঝিয়েছেন?
শ্রীল প্রভুপাদ: তিনি বুঝিয়েছেন যে, আমাদের বাসনা করতে হবে কেবল তাঁরসেবা করা। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে- “আমি ধনসম্পদ চাই না, অনুগামী চাই না, আমি সুন্দরী রমণীও চাই না।” তাহলে তিনি কি চান? “আমি কৃষ্ণের সেবা করতে চাই।” এমন নয় যে, তিনি বলছেন, “আমি এটা চাই না, আমি ওটাও চাই না। কেবল শূণ্যে পরিণত হওয়া যাক।” না।
ভক্ত: অভক্তও বলে থাকে যে সে কি চায় তা সে জানে, কিন্তু সে বলে, “আমি কৃষ্ণকে ছাড়াই ওই একই ভাল ফল পেতে পারি।”
শ্রীল প্রভুপাদ: তাহলে সে একটি মূর্খ, কেননা সে আদৌ জানে না, ভাল ফল বলতে সত্যিই কি বোঝায়। আজ সে এক ধরনের ‘ভাল ফল” পাবার জন্য সংগ্রাম করছে, কিন্তু আগামীকাল সে অন্য কিছু আকাঙ্ক্ষা করবে, কেননা মৃত্যুর পর তাকে দেহের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কখনো কখনো সে কুকুরের দেহ ধারণ করছে, আর এক ধরনের ‘ভাল ফল’ পেতে চাইছে, আর কখনও বা সে দেবতার দেহ লাভ করছে, আর অন্য আরেক ধরনের “সুফল” কামনা করছে। ভ্রমতাম্ উপরি অধ:। সে কেবল ব্রহ্মান্ডের উপরে আর নীচে ভ্রমণ করে চলেছে.. ঠিক .. কিসের মত যেন?
ভক্ত: নাগরদোলা।
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। কখনো সে খুব উচ্চ অবস্থায় (স্বর্গে) উন্নীত হচ্ছে, তারপর সেখান থেকে তাকে আবার নীচে আসতে বাধ্য হচ্ছে-আবার কুকুর বা শূকরের জীবন। এরকমই চলেছে অবিরাম।
ব্রহ্মান্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব।
গুরু-কৃষ্ণ-প্রসাদে পায় ভক্তি-লতা-বীজ।।
“বহু বহু জীবন ধরে ব্রহ্মান্ডের উপরে ও নীচে ভ্রমণ করতে করতে, কোন ভাগ্যবান জীব গুরুদেব ও কৃষ্ণের কৃপায় ভক্তিযোগের সংস্পর্শে আসে।”
ভক্ত: আচ্ছা, অভক্ত তখন বলবে, “আমরাও খুব ভাল কাজ করছি। আপনারা খাদ্য বিতরণ করছেন, আমরাও খাদ্য বিতরণ করছি। আপনারা স্কুল খুলছেন, আমরাও স্কুল খুলছি।”
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ, কিন্তু আমরা এরকম স্কুল খুলছি যেখানে কৃষ্ণভাবনামৃত শিক্ষা দেওয়া হয়, অন্য দিকে তোমাদের স্কুলে কেবল মায়া শেখানো হয়। সমস্যাটা হচ্ছে এই যে দুর্বুদ্ধি বিশিষ্ট মূর্খগুলো কখনো ভক্তি ও কর্মের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারে না। ভক্তিকেও কর্মের মতো দেখায়, কিন্তু ভক্তি কর্ম নয়। ভক্তিযোগে আমরাও কর্ম করি, কিন্তু কেবল কৃষ্ণের জন্য। এটাই হচ্ছে পার্থক্য।
উদাহরণস্বরূপ, অর্জুন কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছিলেন; কিন্তু যেহেতু তিনি কৃষ্ণের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেজন্য তিনি একজন মহান ভক্তরূপে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। কৃষ্ণ তাকেঁ বলেছিলেন, ভক্তোহসি...প্রিয়োহসি মে: “অর্জুন, তুমি আমার প্রিয়ভক্ত।” অর্জুন কি করেছিলেন? তিনি শুধু যুদ্ধ করেছিলেন, ব্যস্। কিন্তু তিনি কৃষ্ণের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। সেটাই হচ্ছে রহস্য। একজন যোদ্ধা হিসাবে তিনি তাঁর যুদ্ধ করার ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটান নি, তিনি কেবল তাঁর মানসিকতা পরিবর্তন করেছিলেন। প্রথমে তিনি ভাবছিলেন, “কেন আমি আমার স্বজনবর্গকে হত্যা করব? বরং যুদ্ধ ক্ষেত্র পরিত্যাগ করে অরণ্যে যাওয়া যাক, একজন ভিক্ষুক হওয়া যাক-সেটাই ভাল।” কিন্তু কৃষ্ণ চেয়েছিলেন অর্জুন যেন যুদ্ধ করেন, সুতরাং অবশেষে তিনি আত্মসমর্পণ করলেন এবং যুদ্ধ করলেন-কৃষ্ণের সেবা হিসাবে। তিনি যুদ্ধ করলেন তাঁর নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য নয়-কৃষ্ণের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য।
ভক্ত: তাহলে এমনকি ভক্তিযোগেও কি ইন্দ্রিয়তৃপ্তি রয়েছে?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। একজন কর্মী তাঁ নিজের ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্য কর্ম করে, আর একজন ভক্ত কৃষ্ণের ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্য কর্ম করেন। এই হচ্ছে ভক্ত ও অভক্তের মধ্যে পার্থক্য। উভয় ক্ষেত্রেই ইন্দ্রিয়তৃপ্তি রয়েছে, কিন্তু তোমার নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য যখন কাজ কর তখন সেটা কর্ম, কিন্তু যখন তুমি কৃষ্ণের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য কাজ কর, তখন সেটা ভক্তি। ভক্তি আর কর্ম একইরকম দেখায়, কিন্তু তাদের গুণগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন।
আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে গোপিকাগণের আচরণ। কৃষ্ণ একজন সুন্দর কিশোর ছিলেন, আর গোপিকারা কৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। তারা তাঁকে তাদের প্রেমিকরূপে বরণ করেছিল, আর সেজন্য গভীর রাত্রে গৃহত্যাগ করে তাঁরা কৃষ্ণের সঙ্গে নৃত্য করতে গিয়েছিল। অতএব এমন মনে হতে পারে যে তাদের ঐ আচরণ ছিল নিন্দনীয়, পাপপূর্ণ-কিন্তু বাস্তবে তা নয়-কেননা কেন্দ্রটি ছিলেন কৃষ্ণ। সেজন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অনুমোদন করেছেন, রম্যা কাচিদুপাসনা ব্রজবধূবর্গেন যা কল্পিতা-“গোপাঙ্গনাগণ যেভাবে আরাধনা করেছেন তার চেয়ে কৃষ্ণ আরাধনার আর কোন শ্রেষ্ঠ পন্থা নেই।”
কিন্তু বদমাশগুলো ভাবে, “ও: এটা খুবই ভাল। কৃষ্ণ মধ্যরত্রিতে অন্যদের স্ত্রীর সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন, অতএব আমরাও কিছু মেয়ে সংগ্রহ করি, আর কৃষ্ণের মত উপভোগ করি।” এই হচ্ছে গোপাঙ্গনাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের লীলাবিলাসের স্থূল, বিকৃত উপলব্ধি। এরকম বিভ্রান্তি রোধ করার জন্য শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম নয়টি স্কন্দ এই বর্ণনায় নিয়োগ করেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান। তারপর তিনি গোপিকাদের সাথে কৃষ্ণের আচরণের বর্ণনা দিয়েছে। কিন্তু বদমাশগুলো প্রথমেই দশম স্কন্দে গোপিকা ও কৃষ্ণের লীলার বর্ণনা পড়তে শুরু করে। এইভাবে তারা সহজিয়ায় (কৃষ্ণের অনুকরণকারী) পরিণত হয়।
ভক্ত: এইসব মানুষরা যেহেতু কোন না কোনভাবে কৃষ্ণচিন্তা করছে, সেজন্য এদের কি কখনো চিত্তবৃত্তির পরিবর্তন হবে?
শ্রীল প্রভুপাদ: কখনই না। কংসও কৃষ্ণের চিন্তা করত, কিন্তু শত্রুরূপে। সেটা ভক্তি নয়। ভক্তিকে অবশ্যই হতে হবে আনুকূল্যেন কৃষ্ণানুশীলনম্- অনুকূল ভক্তিমূলক সেবা। কারও কৃষ্ণের অনুকরণ করা উচিত নয়, অথবা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা উচিত নয়। অবশ্যই সেরকম করাটাও কৃষ্ণচেতনা, কিন্তু সেটা অনুকূল নয়, আর সেজন্য সেটা ভক্তি নয়। তবুও, কৃষ্ণের শত্রুরাও মুক্তিলাভ করে, কেননা যেভাবেই হোক তারা কৃষ্ণচিন্তা করেছে। কিন্তু তারা নির্বিশেষ মুক্তি (ব্রহ্মজ্যোতিতে লীন থাকা) লাভ করে, চিন্ময় জগতে কৃষ্ণের লীলাবিলাসে তাদেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। যাঁরা কৃষ্ণের প্রতি প্রেমপূর্ণ ভক্তিযুক্ত সেবা অনুশীলন করেন, সেই সৌভাগ্য কেবল তাঁদেরই জন্য সংরক্ষিত থাকে।
উৎস
গ্রন্থ: হরেকৃষ্ণ চ্যালেঞ্জ
পৃষ্ঠা: ৪৯-৫২
প্রাপ্তিস্থান: নিকটস্থ ইসকন মন্দির
নিম্নোক্ত কথোপকথনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এবং তার কিছু শিষ্যের মধ্যে ১৯৭৪ সালের জুন মাসে, জেনিভাতে, খুব ভোরে প্রাত:ভ্রমণের সময়।
ভক্ত: ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে আমাদের নিষ্কাম হতে হবে; একথার মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ কি বুঝিয়েছেন?
শ্রীল প্রভুপাদ: তিনি বুঝিয়েছেন যে, আমাদের বাসনা করতে হবে কেবল তাঁরসেবা করা। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে- “আমি ধনসম্পদ চাই না, অনুগামী চাই না, আমি সুন্দরী রমণীও চাই না।” তাহলে তিনি কি চান? “আমি কৃষ্ণের সেবা করতে চাই।” এমন নয় যে, তিনি বলছেন, “আমি এটা চাই না, আমি ওটাও চাই না। কেবল শূণ্যে পরিণত হওয়া যাক।” না।
ভক্ত: অভক্তও বলে থাকে যে সে কি চায় তা সে জানে, কিন্তু সে বলে, “আমি কৃষ্ণকে ছাড়াই ওই একই ভাল ফল পেতে পারি।”
শ্রীল প্রভুপাদ: তাহলে সে একটি মূর্খ, কেননা সে আদৌ জানে না, ভাল ফল বলতে সত্যিই কি বোঝায়। আজ সে এক ধরনের ‘ভাল ফল” পাবার জন্য সংগ্রাম করছে, কিন্তু আগামীকাল সে অন্য কিছু আকাঙ্ক্ষা করবে, কেননা মৃত্যুর পর তাকে দেহের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কখনো কখনো সে কুকুরের দেহ ধারণ করছে, আর এক ধরনের ‘ভাল ফল’ পেতে চাইছে, আর কখনও বা সে দেবতার দেহ লাভ করছে, আর অন্য আরেক ধরনের “সুফল” কামনা করছে। ভ্রমতাম্ উপরি অধ:। সে কেবল ব্রহ্মান্ডের উপরে আর নীচে ভ্রমণ করে চলেছে.. ঠিক .. কিসের মত যেন?
ভক্ত: নাগরদোলা।
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। কখনো সে খুব উচ্চ অবস্থায় (স্বর্গে) উন্নীত হচ্ছে, তারপর সেখান থেকে তাকে আবার নীচে আসতে বাধ্য হচ্ছে-আবার কুকুর বা শূকরের জীবন। এরকমই চলেছে অবিরাম।
ব্রহ্মান্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান জীব।
গুরু-কৃষ্ণ-প্রসাদে পায় ভক্তি-লতা-বীজ।।
“বহু বহু জীবন ধরে ব্রহ্মান্ডের উপরে ও নীচে ভ্রমণ করতে করতে, কোন ভাগ্যবান জীব গুরুদেব ও কৃষ্ণের কৃপায় ভক্তিযোগের সংস্পর্শে আসে।”
ভক্ত: আচ্ছা, অভক্ত তখন বলবে, “আমরাও খুব ভাল কাজ করছি। আপনারা খাদ্য বিতরণ করছেন, আমরাও খাদ্য বিতরণ করছি। আপনারা স্কুল খুলছেন, আমরাও স্কুল খুলছি।”
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ, কিন্তু আমরা এরকম স্কুল খুলছি যেখানে কৃষ্ণভাবনামৃত শিক্ষা দেওয়া হয়, অন্য দিকে তোমাদের স্কুলে কেবল মায়া শেখানো হয়। সমস্যাটা হচ্ছে এই যে দুর্বুদ্ধি বিশিষ্ট মূর্খগুলো কখনো ভক্তি ও কর্মের পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারে না। ভক্তিকেও কর্মের মতো দেখায়, কিন্তু ভক্তি কর্ম নয়। ভক্তিযোগে আমরাও কর্ম করি, কিন্তু কেবল কৃষ্ণের জন্য। এটাই হচ্ছে পার্থক্য।
উদাহরণস্বরূপ, অর্জুন কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছিলেন; কিন্তু যেহেতু তিনি কৃষ্ণের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেজন্য তিনি একজন মহান ভক্তরূপে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। কৃষ্ণ তাকেঁ বলেছিলেন, ভক্তোহসি...প্রিয়োহসি মে: “অর্জুন, তুমি আমার প্রিয়ভক্ত।” অর্জুন কি করেছিলেন? তিনি শুধু যুদ্ধ করেছিলেন, ব্যস্। কিন্তু তিনি কৃষ্ণের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। সেটাই হচ্ছে রহস্য। একজন যোদ্ধা হিসাবে তিনি তাঁর যুদ্ধ করার ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটান নি, তিনি কেবল তাঁর মানসিকতা পরিবর্তন করেছিলেন। প্রথমে তিনি ভাবছিলেন, “কেন আমি আমার স্বজনবর্গকে হত্যা করব? বরং যুদ্ধ ক্ষেত্র পরিত্যাগ করে অরণ্যে যাওয়া যাক, একজন ভিক্ষুক হওয়া যাক-সেটাই ভাল।” কিন্তু কৃষ্ণ চেয়েছিলেন অর্জুন যেন যুদ্ধ করেন, সুতরাং অবশেষে তিনি আত্মসমর্পণ করলেন এবং যুদ্ধ করলেন-কৃষ্ণের সেবা হিসাবে। তিনি যুদ্ধ করলেন তাঁর নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য নয়-কৃষ্ণের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য।
ভক্ত: তাহলে এমনকি ভক্তিযোগেও কি ইন্দ্রিয়তৃপ্তি রয়েছে?
শ্রীল প্রভুপাদ: হ্যাঁ। একজন কর্মী তাঁ নিজের ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্য কর্ম করে, আর একজন ভক্ত কৃষ্ণের ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির জন্য কর্ম করেন। এই হচ্ছে ভক্ত ও অভক্তের মধ্যে পার্থক্য। উভয় ক্ষেত্রেই ইন্দ্রিয়তৃপ্তি রয়েছে, কিন্তু তোমার নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য যখন কাজ কর তখন সেটা কর্ম, কিন্তু যখন তুমি কৃষ্ণের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য কাজ কর, তখন সেটা ভক্তি। ভক্তি আর কর্ম একইরকম দেখায়, কিন্তু তাদের গুণগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন।
আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে গোপিকাগণের আচরণ। কৃষ্ণ একজন সুন্দর কিশোর ছিলেন, আর গোপিকারা কৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। তারা তাঁকে তাদের প্রেমিকরূপে বরণ করেছিল, আর সেজন্য গভীর রাত্রে গৃহত্যাগ করে তাঁরা কৃষ্ণের সঙ্গে নৃত্য করতে গিয়েছিল। অতএব এমন মনে হতে পারে যে তাদের ঐ আচরণ ছিল নিন্দনীয়, পাপপূর্ণ-কিন্তু বাস্তবে তা নয়-কেননা কেন্দ্রটি ছিলেন কৃষ্ণ। সেজন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অনুমোদন করেছেন, রম্যা কাচিদুপাসনা ব্রজবধূবর্গেন যা কল্পিতা-“গোপাঙ্গনাগণ যেভাবে আরাধনা করেছেন তার চেয়ে কৃষ্ণ আরাধনার আর কোন শ্রেষ্ঠ পন্থা নেই।”
কিন্তু বদমাশগুলো ভাবে, “ও: এটা খুবই ভাল। কৃষ্ণ মধ্যরত্রিতে অন্যদের স্ত্রীর সঙ্গে নৃত্য করেছিলেন, অতএব আমরাও কিছু মেয়ে সংগ্রহ করি, আর কৃষ্ণের মত উপভোগ করি।” এই হচ্ছে গোপাঙ্গনাদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের লীলাবিলাসের স্থূল, বিকৃত উপলব্ধি। এরকম বিভ্রান্তি রোধ করার জন্য শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীমদ্ভাগবতের প্রথম নয়টি স্কন্দ এই বর্ণনায় নিয়োগ করেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান। তারপর তিনি গোপিকাদের সাথে কৃষ্ণের আচরণের বর্ণনা দিয়েছে। কিন্তু বদমাশগুলো প্রথমেই দশম স্কন্দে গোপিকা ও কৃষ্ণের লীলার বর্ণনা পড়তে শুরু করে। এইভাবে তারা সহজিয়ায় (কৃষ্ণের অনুকরণকারী) পরিণত হয়।
ভক্ত: এইসব মানুষরা যেহেতু কোন না কোনভাবে কৃষ্ণচিন্তা করছে, সেজন্য এদের কি কখনো চিত্তবৃত্তির পরিবর্তন হবে?
শ্রীল প্রভুপাদ: কখনই না। কংসও কৃষ্ণের চিন্তা করত, কিন্তু শত্রুরূপে। সেটা ভক্তি নয়। ভক্তিকে অবশ্যই হতে হবে আনুকূল্যেন কৃষ্ণানুশীলনম্- অনুকূল ভক্তিমূলক সেবা। কারও কৃষ্ণের অনুকরণ করা উচিত নয়, অথবা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা উচিত নয়। অবশ্যই সেরকম করাটাও কৃষ্ণচেতনা, কিন্তু সেটা অনুকূল নয়, আর সেজন্য সেটা ভক্তি নয়। তবুও, কৃষ্ণের শত্রুরাও মুক্তিলাভ করে, কেননা যেভাবেই হোক তারা কৃষ্ণচিন্তা করেছে। কিন্তু তারা নির্বিশেষ মুক্তি (ব্রহ্মজ্যোতিতে লীন থাকা) লাভ করে, চিন্ময় জগতে কৃষ্ণের লীলাবিলাসে তাদেরকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। যাঁরা কৃষ্ণের প্রতি প্রেমপূর্ণ ভক্তিযুক্ত সেবা অনুশীলন করেন, সেই সৌভাগ্য কেবল তাঁদেরই জন্য সংরক্ষিত থাকে।
উৎস
গ্রন্থ: হরেকৃষ্ণ চ্যালেঞ্জ
পৃষ্ঠা: ৪৯-৫২
প্রাপ্তিস্থান: নিকটস্থ ইসকন মন্দির
No comments:
Post a Comment