Tuesday, October 15, 2013

পবিত্র বেদে কোন মুহাম্মদের উল্লেখ নেই

পবিত্র বেদ হিন্দুদের সর্ব্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ এবং অলঙ্ঘনীয়.কোন কিছু বেদে থাকলেই যে কোন হিন্দু তা মেনে নেবে আর এই সুযোগটাই কিছু দিন ধরে নিচ্ছে কতিপয় ইসলামিক মিথ্যাবাজ বিশেষত জাকির নায়েকের মত ভন্ডরা যারা প্রচার করছে পবিত্র বেদে মুহম্মদ এর কথা উল্লেখিত আছে এবং তাকে ঋষি ও স্বর্গীয় বার্তাবাহক বলা হয়েছে.জাকির নায়েক এর ওয়েবসাইট এ তাদের এহেন দাবীকৃত মন্ত্র ও সেগুলোর অর্থ বিকৃত করে তার দাবীসমূহের পর্যালোচনা করে দেখা যাক-
জাকির নায়েক এর দাবী-
অথর্ববেদ ২0/1২7/1
তিনি নরসংশ যার অর্থ প্রশংসিত, তিনি কৈরামা অর্থাত্ শান্তির রাজপুত্র, যিনি 60099 জন শত্রুর মধ্যেও নিরাপদ ছিলেন-যেহেতু মুহম্মদ শব্দের অর্থও প্রশংসিত আর তখনকার সময়ে মক্কার অধিবাসী সংখ্যাও ছিল প্রায় 60000 সেহেতু এটা মুহম্মদ কেই ইঙ্গিত করা হয়েছে
* প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষন-
নরসংশ শব্দের অর্থ কোনভাবেই 'প্রশংসিত' নয় বরং প্রশংসাকারী, তাই এটার অর্থ মুহম্মদ এর সমার্থক নয়.আর যদি হতও তারপরও নামের অর্থ মিল দিয়ে এরুপ বলাটা হাস্যকর.যেমন ধরুন 'বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম' এর অর্থ পরম করুনাময় এর নামে শুরু করছি.অপরদিকে সংস্কৃত তে 'দয়ানন্দ নমো নমোঃ' এর আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে পরম দয়াময় এর নামে শুরু করছি.তার মানে কি এই যে কোরান মহর্ষি দয়ানন্দ স্বরস্বতী এর ভবিষ্যত্বানী করছে? কৈরামা শব্দের অর্থ আসলে হচ্ছে যিনি শান্তির সাথে পৃথিবী তে বসবাস করে.সারাজীবন অসংখ্য রক্তহ্ময়ী যুদ্ধে লিপ্ত থাকা (হোক তার কারন ইতিবাচক বা নেতিবাচক) মুহম্মদ তাই ছিলেন কি? পরন্তু মক্কার অধিবাসী কত ছিল তা কোন জায়গায় ই লিপিবদ্ধ নেই.জাকির নায়েক এর এই জনসংখ্যা সম্পুর্ন মনগড়া কল্পনা.
জাকির নায়েকের দাবী ২0.1২7.২
তিনি উট আরোহনকারী ঋষি যার রথ স্বর্গ স্পর্শ করে-যেহেতু উটের কথা বলা হয়েছে সেহেতু এটা মরুভুমির কথা.এছাড়া মনুসংহিতা (11.২0২) মতে একজন ব্রাক্ষ্মন এর উটে চরা নিষিদ্ধ সেহেতু এখানে কোন ভারতীয় এর কথা বলা হয়নি
প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষন-
মনুসংহিতা 11.২0২ এ বলা হয়েছে ব্রাক্ষ্মন এর উট আরোহন নিষিদ্ধ কিন্তু বেদের এই সুক্তটি একজন রাজর্ষি বা ক্ষত্রিয় ঋষির জন্য.অপরদিকে মরুভুমি শুধু আরবে নেই ভারতেও আছে (রাজস্থান).
জাকির নায়েকের দাবী ২0.1২7.3
তিনি একজন 'MAMAH' ঋষি যাকে দেয়া হয়েছে 100 টি স্বর্নমুদ্রা, 10 টি হার, 300 টা অশ্ব, 10000 গাভী-এখানে MAMAH অর্থ উচ্চ শ্রদ্ধাযুক্ত, 100 টি স্বর্নমুদ্রা দিয়ে মুহম্মদ এর 100 জন অনুসারী এবং 10 টি হার দিয়ে 10 জন সাহাবীকে বোঝানো হয়েছে. এছাড়া গো অর্থ গরু ছাড়াও Gaw বা এবং এর মাধ্যমে যুদ্ধে যাওয়া 10000 সাহাবী কে বোঝানো হয়েছে.তাছাড়া গরু খুবই দয়াশীল ও শান্ত প্রানী, ঠিক যেমন ছিলেন মুহম্মদ এর ওই সৈন্যরা যুদ্ধ যান

প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষন-
প্রথমেই বলে নেই যে এই দাবীটি ছিল সবগুলো দাবীর মধ্যে সবচেয়ে হাস্যকর.এখানে শব্দটি MAMAH (মমহ) নয় বরং MAMAHE (মম-আমি, অহে-দেই), কোনভাবেই যার অর্থ উচ্চ শ্রদ্ধাশীল নয়. এছাড়া কোনখানেই পাওয়া যায়না যে গো অর্থ যুদ্ধে যেতে হতে পারে.গোপথ ব্রাক্ষ্মন এ গো অর্থ দেয়া হয়েছে-গরু, পৃথিবী.কিন্তু যখনই কোন উপহার অথবা দানের কথা (যেটা এখানে বলা হচ্ছে) বলা হয় তখন গরু অর্থটা প্রযোজ্য.তখনকার দিনে গাভীদান অত্যন্ত প্রচলিত একটা রীতি ছিল.আর গরু অর্থ দয়াশীল এবং শান্তই হয়ে থাকে তবে মুসলমানরা গরু হত্যা করে কেন? এখন আবার 10 টি হার 10 জন সাহাবী হয়ে গেছে.হাহাহা.মুসা এরও তো 10 টি আজ্ঞা ছিল.তাহলে এখন ইহুদিরা যদি দাবী করে এটা মূসা এর কথা বলেছে?
জাকির নায়েকের দাবী
ঋগবেদ 1/53/9 এ ঋষিকে বলা হয়েছে সুশ্রম যার অর্থ প্রশংসিত, আরবীতে মুহম্মদ শব্দের অর্থও একই
আবার ও শব্দের বিকৃতি.এখানে শব্দটি হচ্ছে সুশ্রবস যার অর্থ বিশ্বাশযোগ্য সহচর.
জাকির নায়েকের দাবী-
অথর্ববেদ ২0/২1/6 এখানে একটি শব্দ আছে Karo,, যার অর্থ Praying এক আরবীতে যার অর্থ আহমদ, মুহম্মদ এর অপর নাম
কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হল মন্ত্রটিতে Karo, বলতে কোন শব্দই নেই! এখানে শব্দটি হচ্ছে KARAVE যার অর্থ 'কর্মদক্ষ'.
জাকির নায়েক এর দাবী-
সামবেদ ২.6.8 এ একটি অংশ আছে উচ্চ যেটা আসলে পন্ডিতগন ভূল বুঝেছেন! এটা আসলে হবে আহমেদ এ এইচ এম!
প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষন-
আসলেই বুঝতে পারছিনা যে এটা কি ইসলামের ভাষায় তথাকথিত কাফেরদের হাসাতে হাসাতে মেরে ফেলার নতুন জিহাদ কিনা.কেননা সামবেদের আগাপাস্তালা খুঁজেও ২.6.8 বলে কোন মন্ত্র পেলাম না! জাকির নায়েক এভাবে আরো একবার বেদ এ হিজাব খুঁজতে গিয়ে ঋগবেদ 10.85.30 এর রেফারেন্স দিয়েছিলেন যা আসলে বেদ এ নেই ই! বেদ জীবনে চোখে না দেখেই কাদিয়ানীদের বই থেকে কপি পেস্ট করার ফলাফল এটা.
অপরদিকে জাকির এর নূন্যতম সংস্কৃত জ্ঞান না থাকার প্রমান হল অহম (এইচ এম) শব্দটি না বোঝা.বৈদিক ধর্মের অত্যন্ত বিখ্যাত একটি মন্ত্র 'অহম ব্রহ্মাস্মি' অর্থাত্ আমার (এই) আত্মা ই ব্রহ্মের স্বরুপ.অহম অর্থ আমি নিজে, এই সামান্য অর্থটাও জানেনা যে সে এসেছে বেদ নিয়ে ভন্ডামী করতে!

সাধারন হিন্দুদের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা.তাই আমাদের সকলের ই বেদ শিক্ষা অত্যন্তজরুরি.

No comments:

Post a Comment