Tuesday, October 21, 2014

ভগবত গীতার শিক্ষা

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন মানুষের জীবনে কর্মের প্রয়োজন আছে | কর্ম ছাড়া কেউ এক মূহুর্তও থাকতে পারে না | শরীর যতক্ষণ আছে, কর্মও ততক্ষণ আছে | শারীরিক কর্ম আপাত দৃষ্টিতে না থাকলেও মানসিক কর্ম থাকবেই | মানুষ জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বধর্ম অনুযায়ী কর্ম করা | ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন , কর্মানুষ্ঠান না করে কেহ নৈষ্কর্ম নিষ্ক্রিয় আত্মারূপে অবস্থিতি অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করতে পারে না | কর্মযোগে চিত্ত শুদ্ধি ও আত্মবিবেক না হলে নৈষ্কর্ম সিদ্ধি হয় না | কেবল মাত্র জ্ঞানশূন্য কর্ম ত্যাগ দ্বারা উক্ত অবস্থা লাভ অসম্ভব | নিষ্কাম কর্মের মধ্য দিয়েই কর্মবন্ধন মোচন হয়, চিত্তশুদ্ধি হয় | সেই শুদ্ধচিত্তে আত্মা সাক্ষাৎকার ঘটে | অর্জুনকে তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, 'নিয়তং কুরু কর্ম' অর্থাৎ সর্বদা শাস্ত্রবিহিত কর্ম কর | কর্ম সম্বন্ধে বললেন - অসক্তেন হ্যাচরণ কর্ম পরমাপ্নোতি পুরুষঃ অর্থাৎ অনাসক্ত হয়ে কর্ম করলে মানুষ পরমাগতি প্রাপ্ত হয় | ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে কামনামূলক বৈদিক কর্মকাণ্ড অর্থাৎ প্রধানত যজ্ঞানুষ্ঠান পরিত্যাগ করে নিষ্কাম করম করার উপদেশ দিলেন | তিনি বললেন -

কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন |
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি || (২:47)

অর্থাৎ কর্মেই তোমার অধিকার, কর্মফলে কখনও তোমার অধিকার নাই | কর্মফল যেন তোমার কর্মপ্রবৃত্তির হেতু না হয়, কর্মত্যাগেও যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয় |
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ এবং রাজযোগ, এই চারটি যোগ মুক্তি বা মোক্ষ লাভের পৃথক পৃথক পথ হলেও শেষে সব পথই এক তত্ত্বে মিলিত হয় |
গীতায় সগুণ ও নির্গুণ উপাসনাকে সমান স্থান দেওয়া হয়েছে |
ব্রাহ্মীস্থিতি বা ব্রহ্মনির্বাণ লাভ করা, গুণাতীত যোগারূঢ় বা স্থিতপ্রজ্ঞ হওয়াই গীতার উপদেশ |
গীতায় বলা হয়েছে যে ভগবানের অসংখ্য নাম, অসংখ্য রূপ | যে কোন একটি নামে বা রূপে আমাদের নিষ্ঠা হলেই মুক্তি লাভ হবে | নিষ্ঠাপূর্বক ভগবানের নাম জপ ও একটি রূপ ধ্যান করলেই মোক্ষ লাভ হবে | অপরের ইষ্টকে শ্রদ্ধা করা ইষ্টনিষ্ঠার একটি প্রধান সাধন

No comments:

Post a Comment