আদিকালে জলের মধ্যেই ঘটেছিল প্রথম প্রাণের সঞ্চার. জলচর প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ তত্কালীন প্রাণিজগতে ঈশ্বরের উপস্থিতি তাই মত্স্যরূপেই ছিল স্বাভাবিক.
ক্রমে ক্রমে স্থলভাগেও প্রাণীর অস্তিত্ব প্রসারিত হলো. সৃষ্টি হলো উভয়চর প্রাণীর. ঈশ্বর পৃথিবীতে এলেন কুর্ম হয়ে.
প্রাণিজগতে জলের তুলনায় স্থলভাগের প্রাধান্য ও বৈচিত্র্য বাড়তে লাগল. ঈশ্বর এলেন স্থলচর প্রাণী বরাহ হয়ে.স্থলচর প্রাণিকুলে পশুত্ব ভেদ করে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকল মনুষ্যত্বের স্ফুরণ. সৃষ্টির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা তখন নৃসিংহ. অর্ধেক নর অর্ধেক পশু.তারপর এলো ক্ষুদে মানুষের যুগ. বামন অবতার জানিয়ে দিলেন ত্রিভুবনে মানুষের পদস্পর্শ ঘটার দিন আগত.এভাবেই বিবর্তনের পঞ্চম ধারা অতিক্রম করে বিষ্ণু এলেন পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে.তিনিই পরশুরাম. এরই মধ্যে প্রাণিজগতে স্বাভাবিক মানুষের আবির্ভাবই শুধু ঘটেনি, মানবজাতি সত্যযুগ অতিক্রম করে এসেছে. ঘর বেঁধেছে, সংসার করতে শিখেছে, শিখেছে সমাজ গড়তে, রাজ্য চালাতে, আত্মরক্ষা করতে এবং আক্রমণ চালাতে. পরশুরামের হাতে তাই হরধনু.
পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট.এই নগরীতে গাধি নামে চন্দ্রবংশীয় একজন রাজা ছিলেন. গাধির ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে.গাধিপুত্র বিশ্বামিত্র পরবর্তী সময়ে সাধনা বলে মহর্ষি হয়ে জগত আলোকিত করেন. ক্ষত্রীয়কুলে জন্ম হলেও মহর্ষির স্বীকৃতিলাভের জন্য বশিষ্ঠ মুনির সঙ্গে বিশ্বামিত্রের দ্বন্দ্ব পৌরাণিক কাহিনীর এক চমত্কার সংযোজন.সেই দ্বন্দ্বে বশিষ্ঠ মুনি ছিলেন অটল এবং নির্বিকার. দ্বন্দ্ব চলাকালীন ধীরে ধীরে বিশ্বামিত্রের মধ্যে ক্ষত্রীয় সুলভ ক্রোধের প্রশমন এবং ব্রহ্মতেজের স্ফুরণ ঘটে.
বিশ্বামিত্রের বোন সত্যবতী ছিলেন অসামান্য রূপসী. সত্যবতী বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ভৃগুবংশীয় এক ব্রাহ্মণ সন্তান রিচিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়. পরে রিচিক মুনির ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে জমদগ্নি নামে এক পুত্রের জন্ম হয়.
এই ঋষি জমদগ্নিই হচ্ছেন পরশুরামের বাবা. ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্রসন্তানদের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট; অর্থাত্ পঞ্চম পুত্র.একদিন পরশুরামের মা রেণুকাদেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান. সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধর্বরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরীগণসহ).
পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকাদেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন.অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই. সম্বিত ফিরে রেণুকাদেবী কলস ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান.
তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাতৃহত্যার আদেশ দেন.
প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান.কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন.পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান. তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি.
কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই রইল. শত চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারলেন না তিনি. পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পাপ মুক্তির উপায়ের কথা.পিতা বললেন, তুমি মাতৃহত্যা ও স্ত্রীলোক হত্যা-এই দুই পাপে আক্রান্ত হয়েছ, তাই তোমাকে তীর্থে তীর্থে ঘুরতে হবে, যে তীর্থের জলের স্পর্শে তোমার হাতের কুঠার খসে যাবে; মনে রাখবে সেই তীর্থই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান. পিতার কথা মতো পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন. শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মকুণ্ডের পুণ্য জলে স্নান করে তাঁর হাতের কুঠার খসে গেল.পরশুরাম মনে মনে ভাবলেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে.
তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন.লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি.ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার অন্তর্গত সোনারগাঁওয়ে এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন. এ জন্য এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ.
এরপর এ জলধারা কোমল মাটির বুকচিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে. পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে....
ক্রমে ক্রমে স্থলভাগেও প্রাণীর অস্তিত্ব প্রসারিত হলো. সৃষ্টি হলো উভয়চর প্রাণীর. ঈশ্বর পৃথিবীতে এলেন কুর্ম হয়ে.
প্রাণিজগতে জলের তুলনায় স্থলভাগের প্রাধান্য ও বৈচিত্র্য বাড়তে লাগল. ঈশ্বর এলেন স্থলচর প্রাণী বরাহ হয়ে.স্থলচর প্রাণিকুলে পশুত্ব ভেদ করে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকল মনুষ্যত্বের স্ফুরণ. সৃষ্টির এই অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্রষ্টা তখন নৃসিংহ. অর্ধেক নর অর্ধেক পশু.তারপর এলো ক্ষুদে মানুষের যুগ. বামন অবতার জানিয়ে দিলেন ত্রিভুবনে মানুষের পদস্পর্শ ঘটার দিন আগত.এভাবেই বিবর্তনের পঞ্চম ধারা অতিক্রম করে বিষ্ণু এলেন পূর্ণাঙ্গ মানুষরূপে.তিনিই পরশুরাম. এরই মধ্যে প্রাণিজগতে স্বাভাবিক মানুষের আবির্ভাবই শুধু ঘটেনি, মানবজাতি সত্যযুগ অতিক্রম করে এসেছে. ঘর বেঁধেছে, সংসার করতে শিখেছে, শিখেছে সমাজ গড়তে, রাজ্য চালাতে, আত্মরক্ষা করতে এবং আক্রমণ চালাতে. পরশুরামের হাতে তাই হরধনু.
পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, ত্রেতাযুগের সূচনাকালে মগধ রাজ্যে ভাগীরথীর উপনদী কৌশিকীর তীর ঘেঁষে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল, যার নাম ভোজকোট.এই নগরীতে গাধি নামে চন্দ্রবংশীয় একজন রাজা ছিলেন. গাধির ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে.গাধিপুত্র বিশ্বামিত্র পরবর্তী সময়ে সাধনা বলে মহর্ষি হয়ে জগত আলোকিত করেন. ক্ষত্রীয়কুলে জন্ম হলেও মহর্ষির স্বীকৃতিলাভের জন্য বশিষ্ঠ মুনির সঙ্গে বিশ্বামিত্রের দ্বন্দ্ব পৌরাণিক কাহিনীর এক চমত্কার সংযোজন.সেই দ্বন্দ্বে বশিষ্ঠ মুনি ছিলেন অটল এবং নির্বিকার. দ্বন্দ্ব চলাকালীন ধীরে ধীরে বিশ্বামিত্রের মধ্যে ক্ষত্রীয় সুলভ ক্রোধের প্রশমন এবং ব্রহ্মতেজের স্ফুরণ ঘটে.
বিশ্বামিত্রের বোন সত্যবতী ছিলেন অসামান্য রূপসী. সত্যবতী বয়ঃপ্রাপ্ত হলে ভৃগুবংশীয় এক ব্রাহ্মণ সন্তান রিচিকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়. পরে রিচিক মুনির ঔরসে সত্যবতীর গর্ভে জমদগ্নি নামে এক পুত্রের জন্ম হয়.
এই ঋষি জমদগ্নিই হচ্ছেন পরশুরামের বাবা. ঋষি জমদগ্নির পাঁচ পুত্রসন্তানদের মধ্যে প্রথম সন্তানের নাম রুষন্নন্ত, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সুষেণ, তৃতীয় পুত্রের নাম বসু, চতুর্থ পুত্রের নাম বিশ্বাসুর, পরশুরাম ছিলেন সবার ছোট; অর্থাত্ পঞ্চম পুত্র.একদিন পরশুরামের মা রেণুকাদেবী জল আনতে গঙ্গার তীরে যান. সেখানে পদ্মমালী (মতান্তরে চিত্ররথ) নামক গন্ধর্বরাজ স্ত্রীসহ জলবিহার করছিলেন (মতান্তরে অপ্সরীগণসহ).
পদ্মমালীর রূপ এবং তাদের সমবেত জলবিহারের দৃশ্য রেণুকাদেবীকে এমনভাবে মোহিত করে যে, তিনি তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকেন.অন্যদিকে ঋষি জমদগ্নির হোমবেলা পেরিয়ে যাচ্ছে সেদিকে তার মোটেও খেয়াল নেই. সম্বিত ফিরে রেণুকাদেবী কলস ভরে ঋষি জমদগ্নির সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ান.
তপোবলে ঋষি জমদগ্নি সবকিছু জানতে পেরে রেগে গিয়ে ছেলেদের মাতৃহত্যার আদেশ দেন.
প্রথম চার ছেলে মাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানান.কিন্তু পরশুরাম পিতার আদেশে মা এবং আদেশ পালন না করা ভাইদের কুঠার দিয়ে হত্যা করেন.পরবর্তীকালে পিতা খুশি হয়ে বর দিতে চাইলে তিনি মা এবং ভাইদের প্রাণ ফিরে চান. তাতেই রাজি হন ঋষি জমদগ্নি.
কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে পরশুরামের হাতে কুঠার লেগেই রইল. শত চেষ্টা করেও সে কুঠার খসাতে পারলেন না তিনি. পিতার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন তার পাপ মুক্তির উপায়ের কথা.পিতা বললেন, তুমি মাতৃহত্যা ও স্ত্রীলোক হত্যা-এই দুই পাপে আক্রান্ত হয়েছ, তাই তোমাকে তীর্থে তীর্থে ঘুরতে হবে, যে তীর্থের জলের স্পর্শে তোমার হাতের কুঠার খসে যাবে; মনে রাখবে সেই তীর্থই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান. পিতার কথা মতো পরশুরাম তীর্থে তীর্থে ঘুরতে লাগলেন. শেষে ভারতবর্ষের সব তীর্থ ঘুরে ব্রহ্মকুণ্ডের পুণ্য জলে স্নান করে তাঁর হাতের কুঠার খসে গেল.পরশুরাম মনে মনে ভাবলেন, এই পুণ্য বারিধারা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মানুষ খুব উপকৃত হবে.
তাই তিনি হাতের খসে যাওয়া কুঠারকে লাঙ্গলে রূপান্তর করে পাথর কেটে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে মর্ত্যলোকের সমভূমিতে সেই জলধারা নিয়ে আসেন.লাঙ্গল দিয়ে সমভূমির বুক চিরে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন তিনি.ক্রমাগত ভূমি কর্ষণজনিত শ্রমে পরশুরাম ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার অন্তর্গত সোনারগাঁওয়ে এসে তিনি লাঙ্গল চালানো বন্ধ করেন. এ জন্য এ স্থানের নাম হয় লাঙ্গলবন্দ.
এরপর এ জলধারা কোমল মাটির বুকচিরে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে. পরবর্তীকালে এই মিলিত ধারা বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে....
No comments:
Post a Comment