Saturday, August 29, 2015

১১ টি ভারতীয় কুসংস্কার এবং সেগুলির আড়ালে থাকা সম্ভাব্য যুক্তি

সুচিপত্র:

গ্রহণের সময় বাইরে বেরিয়ো না
দৃষ্টিক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রোধ করা
ঋতুমতি থাকার সময় মেয়েদের কয়েকটি কাজ করা উচিত নয়
মেয়েদের বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া
রাতে অশ্বত্থ গাছের নীচে যাবে না
শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবেশ রোধ করা
কুনজর এড়াতে লেবু লঙ্কার ব্যবহার
এগুলিতে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান থাকায়, এগুলি বেশি করে খেতে উৎসাহ দেওয়া
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর স্নান করা
সংক্রমণ রোধ করতে
সূর্যাস্তের পর নখ কেটো না
নখ কাটতে গিয়ে আলোর অভাবে যাতে কেউ আহত না হয়
একটি নির্দিষ্ট দিনে মাথায় জল দিও না
জল সংরক্ষণ
সন্ধ্যাবেলা ঘর ঝাঁট দিলে দুর্ভাগ্য আসে
অন্ধকারে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী জঞ্জাল হিসেবে হারিয়ে যেতে পারে
বাড়ি থেকে বেরনোর আগে দই ও চিনি খাওয়া
শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য
তুলসী পাতা গিলে ফেলবে, চিবিও না
দাঁতের এনামেলের ক্ষয় রোধ করা
ঘরের মেঝেতে গোবর লেপন পবিত্র
এটি সংক্রমণ রোধ করে
ভারত এমন একটা দেশ যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে নিশ্চিন্তে সহাবস্থান করে প্রচলিত প্রথাগুলি. কখনও এদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে, কখনও বা নীরবে মিলেমিশে যায়. ফলে কখনও আমরা এইসব প্রথাকে প্রশ্নের মুখে ফেলি, কখনও বা এগুলি অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেনে নিই. সমাজে যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়, সে জন্য এগুলি নিয়ে প্রশ্ন করা নিশ্চয় জরুরি. কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের খুঁজতে হবে এই সব চালু প্রথার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে কিনা. আমাদের পূর্বপুরুষদের পালিত বহু বছরের পুরনো প্রথাগুলির আড়ালে থাকা যুক্তিগুলি খোঁজার চেষ্টা করা যাক:
গ্রহণের সময় বাইরে বেরিয়ো নাদৃষ্টিক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রোধ করা
সূর্য গ্রহণের সময় সূর্যের দিকে তাকালে রেটিনায় প্রদাহ বা 'গ্রহণ অন্ধত্ব' হয়ে থাকে. বহু দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আমাদের কোনও পূর্বপুরুষ হয়তো এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন, যে গ্রহণের সময় বাইরে বেরনো উচিত নয়. রাহর সূর্যকে গিলে ফেলার গল্পটা, এই অভ্যাসটা তৈরি করানোর জন্যই বানানো হয়েছিল.
ঋতুমতি থাকার সময় মেয়েদের কয়েকটি কাজ করা উচিত নয়মেয়েদের বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া
1896 সালে প্রথম স্যানিটারি প্যাড আবিষ্কৃত হয়. যন্ত্রণা উপশমের ওষুধের অস্তিত্ব বিংশ শতাব্দীর আগে ছিল না. তার আগে ঋতু চলাকীন সময়ে মেয়েদের ব্যথাবেদনা কমাতে ভারতীয় ওষধির সাহায্য নেওয়া হত. সম্ভবত শারীরিক অসুবিধার কারণে সে সময় মেয়েরা ওই সময় কাজ করত না. ধীরে ধীরে এটা প্রথায় পরিণত হয় এবং কুসংস্কারের পর্যবসিত হয়.
রাতে অশ্বত্থ গাছের নীচে যাবে নাশরীরে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবেশ রোধ করা
সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাঁফন হেলমন্দ গাছের খাদ্য আবিষ্কার করেন. তার আগে দুনিয়া জানত না যে, সূর্যালোক, কার্বন ডাই অক্সাইড একত্রে গাছের শরীরে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে. আমাদের পূর্বপুরুষরা সম্ভবত সালোক সংশ্লেষের বিষয়টি জানতেন এবং রাতে শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবেশের ফলাফল সম্পর্কেও তাঁদের ধারণা ছিল. তাই সাধারণ মানুষকে রাতে অশ্বত্থ গাছের কাছে যেতে বারণ করা হত এবং এর জন্য এই গাছগুলিকে ঘিরে ভূতের গল্প তৈরি হয়েছিল.
কুনজর এড়াতে লেবু লঙ্কার ব্যবহারএগুলিতে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান থাকায়, এগুলি বেশি করে খেতে উৎসাহ দেওয়া
সব চেয়ে দৃশ্যমান কুসংস্কারের অন্যতম হল নিম্বু টোটকা. এটা সম্ভবত লেবু ও লঙ্কার গুণাবলির জন্য এগুলিকে বেশি ব্যবহার করতে বলার সংস্কৃতি থেকেই উদ্ভূত. এই দু'টিতেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আছে, তাই আমাদের পূর্বপুরুষরা সম্ভবত বিভিন্ন উৎসবে এগুলিকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে এগুলির ব্যবহার বাড়াতে প্রচার চালাতেন. সেটাই ধীরে ধীরে টোটকায় পরিণত হয়েছে.
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর স্নান করাসংক্রমণ রোধ করতে
হেপাটাইটিস, গুটি বসন্ত এবং অন্যান্য কঠিন ও সংক্রামক অসুখের টিকা নেওয়ার সুযোগ আমাদের পূর্বপুরুষদের ছিল না. তাই তাঁরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর কিছু প্রথা মেনে চলতেন, যাতে মৃতদেহ থেকে কোনও সংক্রমণ তাদের শরীরে না ছড়ায়. ধীরে ধীরে এই অনুশীলনের সঙ্গে বিদেহী আত্মার গল্প জুড়ে যায়.
সূর্যাস্তের পর নখ কেটো নানখ কাটতে গিয়ে আলোর অভাবে যাতে কেউ আহত না হয়
আমাদের পূর্বপুরুষরা ব্লেড বা অন্যান্য ধারালো বস্তু দিয়ে নখ কাটতেন. এই কাজটি খুব নিখুঁত ভাবে করতে হয়. আলো না থাকলে এটা করলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে. তাই এই কাজটি দিনের বেলায় করার প্রথা তৈরি হয়েছিল. কিন্তু আজকের দিনে বিদ্যুতের আবিষ্কারের পর এই প্রথার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই.
একটি নির্দিষ্ট দিনে মাথায় জল দিও নাজল সংরক্ষণ
মঙ্গলবার বা বৃহস্পতিবার বা কোনও একটা দিনে মাথা না ধোওয়ার অনুশীলন তৈরি হয়েছিল, জল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা থেকে.
সন্ধ্যাবেলা ঘর ঝাঁট দিলে দুর্ভাগ্য আসেঅন্ধকারে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী জঞ্জাল হিসেবে হারিয়ে যেতে পারে
সূর্যাস্তের পর ঘর ঝাঁট না দেওয়া এমন একটি কুসংস্কার, যার সঙ্গে আমরা সকলেই কম বেশি .

No comments:

Post a Comment