Saturday, March 18, 2017

শিব কি..শিবলিঙ্গ মানে কি ?.

আক্ষরিক বিশ্লেষণে দেখা যায়- 'শিব' শব্দের অর্থ 'মঙ্গল' আর 'লিঙ্গ' শব্দের অর্থ প্রতীক বা চিহ্ন. শাস্ত্র 'শিব' বলতে নিরাকার সর্বব্যাপি পরমাত্মা বা পরমব্রহ্মকে বোঝায়. তাই 'শিবলিঙ্গ' হচ্ছে মঙ্গলময় পরমাত্মার প্রতীক.

[* ভ্রষ্ট ব্যক্তিগণ বা অজ্ঞান অনেকেই 'শিবলিঙ্গ' বলতে
পুরুষাঙ্গ বিশেষ মনে করেন-কিন্তু এটা ভ্রান্ত ধারণা.
একথা সহজেই অনুমেয় যে, নিরাকার পরমাত্মার
পুরুষাঙ্গ থাকতে পারে না. তাছাড়া পুরুষাঙ্গের সংস্কৃত
প্রতিশব্দ 'শিশ্ন'. আর 'লিঙ্গ' শব্দের অর্থ 'প্রতীক' বা 'চিহ্ন'.
শিবপুরাণ ও অন্যান্য সকল শাস্ত্রেই 'শিবলিঙ্গ' বলতে '
পরমব্রহ্মের প্রতীক'-ই বোঝানো হয়েছে.]

শিবপুরাণ অনুসারে ভগবান শিবই একমাত্র ব্রহ্মরূপ হওয়ায় তাঁকে 'নিষ্কল' (নিরাকার) বলা হয়. যেহেতু তিনি 'সর্বশক্তিমান' তাই তিনি জগতকল্যাণের জন্য রূপধারণও করতে পারেন. রূপবান হওয়ায় তাঁকে 'সকল' বলা হয়. তাই তিনি 'সকল' এবং 'নিষ্কল'-দুইই. শিব নিষ্কল-নিরাকার হওয়ায় তাঁর পূজার আধারভূত লিঙ্গও নিরাকার অর্থাৎ লিবলিঙ্গ শিবের নিরাকার স্বরূপের প্রতীক. তেমনই শিব সকল বা সাকার হওয়ায় তাঁর পূজার আধারভূত বিগ্রহ সাকাররূপ.
'সকল' (সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ সাকার) এবং 'অকল' (হস্তপদমুখচক্ষু ইত্যাদি অঙ্গ-আকার থেকে সর্বতোভাবে রহিত নিরাকার) রূপ হওয়াতেই শিব 'ব্রহ্ম' শব্দ দ্বারা কথিত পরমাত্মা. এইজন্যই সকলে লিঙ্গ (নিরাকার স্বরূপ) এবং মূর্তি (সাকার স্বরূপ) -দুয়েতেই পরমেশ্বর শিবের পূজা করে থাকেন. শিব ব্যতীত অন্য যেসকল দেবতা আছেন, তাঁরা সাক্ষাৎ ব্রহ্ম নন, তাই কোথাও তাঁদের নিরাকার লিঙ্গ দেখা যায় না. লিঙ্গ সাক্ষাৎ ব্রহ্মের প্রতীক.
তথ্যসূত্র: শিবপুরাণ
আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ
1. শিবলিঙ্গের পূজা কেবল ভারত আর শ্রীলঙ্কায় সীমাবদ্ধ নয়:
প্রাচীন রোমে 'প্রায়াপাস' নামে যে বিগ্রহের পূজা হতো, অনেকের মতে সেটি শিবলিঙ্গই ছিল. হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতার যে ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে বেশ কিছু শিবলিঙ্গ.

২. শিবলিঙ্গে থাকে মোট তিনটি অংশ:
সবচেয়ে নীচের চারমুখী অংশটি থাকে মাটির নীচে. তার উপরের অংশটি আটমুখী, যা বেদীমূল হিসেবে কাজ করে. আর একেবারের উপরের অর্ধবৃত্তাকার অংশটি পূজিত হয়. এই অংশটির উচ্চতা হয় এর পরিধির এক তৃতীয়াংশ. এই তিনটি অংশের সবচেয়ে নীচের অংশটি ব্রহ্মা, তার উপরের অংশটি বিষ্ণু ও একেবারে উপরের অংশটি শিবকে প্রতীকায়িত করে. বেদীমূলে একটি লম্বাকৃতি অংশ রাখা হয়, যা শিবলিঙ্গের মাথায় ঢালা জল বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে. এই অংশের নাম গৌরীপট্ট, যা মূলত যোনিপ্রতীক.
3. শিবলিঙ্গ পূজার মধ্যে কোনও অশ্লীলতা নেই:
শিবলিঙ্গ একই সঙ্গে শিবের সৃজনাত্মক ও ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক. অনেকে যে একে পুরুষাঙ্গের পূজা হিসেবে ব্যাখ্যা করে অশ্লীলতা বলে মনে করেন, তা একেবারেই ভুল ব্যাখ্যা. তা ছাড়া, হিন্দু ধর্মে শিবকে নিরাকার বলে মনে করা হয়. কাজেই তাঁর লিঙ্গ যে একেবারেই প্রতীকী বিষয়, তা বোঝা প্রয়োজন.
4. স্বামী বিবেকানন্দের ব্যাখ্যা:
স্বামীজী 'অথর্ববেদ'-এর শ্লোক উদ্ধৃত করে শিবলিঙ্গকে আদি ব্রহ্মের স্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন. তাঁর মতে, আদি ও অন্তহীন ব্রহ্মের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ.
5. শিবলিঙ্গের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:
শিবলিঙ্গের দিকে তাকালে দেখা যাবে এর লম্বাকৃতি অংশটিতে পরপর তিনটি খাঁজ কাটা রয়েছে. বিজ্ঞানী নিলস বোরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এই তিনটি খাঁজ আসলে অণুর তিনটি উপাদান- প্রোটন, নিউট্রন ও ইলেকট্রনের প্রতীক. এই তিনটি উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড. অর্থাৎ কার্যত ব্রহ্মাণ্ডের গঠনের প্রতীক হল শিবলিঙ্গ.
6. শিবলিঙ্গের বৈদিক ব্যাখ্যা:
শিবলিঙ্গ যেহেতু ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক সেহেতু শিবলিঙ্গ পূজা করার অর্থ, আদি শক্তির সঙ্গে চৈতন্যের মিলনকে স্মরণে রাখা. এই 'মিলন'-এর অর্থ অবশ্য শারীরিক মিলন নয়, বরং এ এক অতিপ্রাকৃত মিলন. প্রসঙ্গত এ কথাও বলা প্রয়োজন যে, সংস্কৃত ভাষায় 'লিঙ্গ' শব্দটির অর্থ কিন্তু পুরুষাঙ্গ নয়, বরং চিহ্ন. নির্গুণ শক্তি যখন সগুণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা শুরু করে তখন লিঙ্গই হয়ে ওঠে সেই রূপান্তরের চিহ্ন.
7. শিবলিঙ্গের গায়ে যে সাপটি থাকে তা আসলে সুপ্ত চেতনার প্রতীক:
শিবলিঙ্গের গায়ে অনেক সময়ে যে সাপটি প্যাঁচালো অবস্থায় দেখা যায়, সেটি আসলে কুলকুণ্ডলিনীর প্রতীক. এই শক্তির জাগরণকে চিহ্নিত করে শিবলিঙ্গ.

আসলে হাজার বছরের বিদেশি শাসনে পরাধীন থাকায় বিদেশী শাসকগন সনাতন ধর্মকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করেছে. শুধু উপাসনালয় ভেঙ্গেই ক্ষান্ত থাকেনি, নানা কুৎসা রটাতেও পিছপা হয়নি. ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মুসলিম শাসকরা মন্দির ধ্বংসে মনযোগী ছিল আর ইংরেজরা মন্দির ভাঙ্গেনি ঠিক তবে বুদ্ধিমান পাদ্রীরা আমাদের ধর্মকে আঘাত করেছে অন্যভাবে. 1815 সালে আ ভিউ অফ দ্য হিস্ট্রি, লিটারেচার, অ্যান্ড মিথোলজি অফ দ্য হিন্দুজ গ্রন্থে লেখক ব্রিটিশ মিশনারি উইলিয়াম ওয়ার্ড হিন্দুদের অন্যান্য ধর্মীয় প্রথার সঙ্গে লিঙ্গপূজারও নিন্দা করেছিলেন. তাঁর মতে লিঙ্গপূজা ছিল,

"মানুষের চারিত্রিক অবনতির সর্বনিম্ন পর্যায়". শিবলিঙ্গের প্রতীকবাদটি তাঁর কাছে ছিল 'অত্যন্ত অশালীন; সে সাধারণের রুচির সঙ্গে মেলানোর জন্য এর যতই পরিমার্জনা করা হোক না কেন ". ব্রায়ান পেনিংটনের মতে, ওয়ার্ডের বইখানা "ব্রিটিশদের হিন্দুধর্ম সম্পর্কে ধারণা ও উপমহাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্বের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছিল." ব্রিটিশরা মনে করত, শিবলিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গে আদলে নির্মিত এবং শিবলিঙ্গের পূজা ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে.প্রতীক. "ডেভিড জেমস স্মিথ প্রমুখ গবেষকেরা মনে করেন, শিবলিঙ্গ চিরকালই পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি বহন করছে.জেনেন ফলারের মতে, লিঙ্গ" পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে নির্মিত এবং এটি মহাবিশ্ব-রূপী এক প্রবল শক্তির.

আবার ইউরোপের সব বুদ্ধিজীবী হিন্দু বিদ্বেষী ছিল এটা বলা অন্যায় হবে.কারন অনেকেই শিব লিঙ্গ সম্পর্কে উপরোক্ত মতবাদকে গ্রহণ না করে সত্য অনুসন্ধান করেছেন. যেমন 18২5 সালে হোরাস হেম্যান উইলসন দক্ষিণ ভারতের লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি বই লিখে এই ধারণা খণ্ডানোর চেষ্টা করেছিলেন.

লিঙ্গ "পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে নির্মিত এবং এটি মহাবিশ্ব-রূপী এক প্রবল শক্তির.
আবার ইউরোপের সব বুদ্ধিজীবী হিন্দু বিদ্বেষী ছিল এটা বলা অন্যায় হবে.কারন অনেকেই শিব লিঙ্গ সম্পর্কে উপরোক্ত মতবাদকে গ্রহণ না করে সত্য অনুসন্ধান করেছেন. যেমন 18২5 সালে হোরাস হেম্যান উইলসন দক্ষিণ ভারতের লিঙ্গায়েত সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি বই লিখে এই ধারণা খণ্ডানোর চেষ্টা করেছিলেন.
নৃতাত্ত্বিক ক্রিস্টোফার জন ফুলারের মতে, হিন্দু দেবতাদের মূর্তি সাধারণত মানুষ বা পশুর অনুষঙ্গে নির্মিত হয়. সেক্ষেত্রে প্রতীকরূপী শিবলিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম.কেউ কেউ মনে করেন, লিঙ্গপূজা ভারতীয় আদিবাসী ধর্মগুলি থেকে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে.
এবার আমরা জানব শিবলিঙ্গ আসলে কিঃ
_______________________________________________
শিবলিঙ্গ বা লিঙ্গম্ দেবতা শিবের একটি প্রতীক. হিন্দু মন্দিরগুলিতে সাধারণত শিবলিঙ্গে শিবপূজা করা হয়ে থাকে.একটি সাধারণ তত্ত্ব অনুযায়ী, শিবলিঙ্গ শিবের আদি-অন্তহীন সত্ত্বার প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের রূপবিশেষ.
শিব এক অনাদি অনন্ত লিঙ্গস্তম্ভের রূপে আবির্ভূত, বিষ্ণু বরাহ বেশে স্তম্ভের নিম্নতল ও ব্রহ্মা ঊর্ধ্বতল সন্ধানে রত. এই অনাদি অনন্ত স্তম্ভটি শিবের অনাদি অনন্ত সত্ত্বার প্রতীক মনে করা হয়.
আবার কেউ কেউ শিব লিঙ্গের ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ইহা গোল কিম্বা উপবৃত্তাকার যা কোন বৃত্তাকার ভূমি (বেস) কে কেন্দ্র করে স্থাপিত. এই গোল ভূমি কে আদি পরশক্তি বা চূড়ান্ত শক্তি .আর সেই গোল কিম্বা বৃত্তাকার অংশ দ্বারা অসীম কে বোঝান হয় যার কোন আদি অন্ত নেই অর্থাৎ যা সর্ববিরাজমান. সর্ববিরাজমান অর্থ হল যা সব জায়গায় অবস্থিত.
ইহা দ্বারা বোঝান হয় ঈশ্বর নির্দিষ্ট আকার নাও থাকতে পারে. ঈশ্বর আদি অন্ত জুড়ে সর্বত্র বিরাজমান.
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ইহার ডান দিকে অবস্থান করছেন. রক্ষাকর্তা বিষ্ণু বাম দিকে অবস্থান করছেন.
এছাড়াও এই শিবলিঙ্গের কিছু ব্যখ্যা রয়েছে যার সব গুলোতেই বুঝানো হয়েছে - অনন্ত বোঝাতে কিম্বা জীবনের ধারাবাহিকতা বোঝাতে এই শিব লিঙ্গের অবতারণা.
এককথায় বোঝান হয়েছেঃ ঈশ্বর শুধু মাত্র স্বর্গে বা মন্দিরে অবস্থিত না, ভক্ত যেখানে তার জন্য প্রার্থনা করে. সেখানেই তিনি অবস্থিত
অথর্ববেদে একটি স্তম্ভের স্তব করা হয়েছে. এটিই সম্ভবত লিঙ্গপূজার উৎস. কারোর কারোর মতে যূপস্তম্ভ বা হাঁড়িকাঠের সঙ্গে শিবলিঙ্গের যোগ রয়েছে. উক্ত স্তবটিকে আদি-অন্তহীন এক স্তম্ভ বা স্কম্ভ-এর কথা বলা হয়েছে; এই স্কম্ভ চিরন্তন ব্রহ্মের স্থলে স্থাপিত. যজ্ঞের আগুন, ধোঁয়া, ছাই, সোমরস ও যজ্ঞের কাঠ বহন করার ষাঁড় ইত্যাদির সঙ্গে শিবের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির যোগ লক্ষিত হয়. মনে করা হয়, কালক্রমে যূপস্তম্ভ শিবলিঙ্গের রূপ নিয়েছিল. লিঙ্গপুরাণে এই স্তোত্রটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি কাহিনির অবতারণা করা হয়. এই কাহিনিতে উক্ত স্তম্ভটিকে শুধু মহানই বলা হয়নি বরং মহাদেব শিবের সর্বোচ্চ সত্ত্বা বলে উল্লেখ করা হয়েছে.
ভারত ও কম্বোডিয়ায় প্রচলিত প্রধান শৈব সম্প্রদায় ও অনুশাসন গ্রন্থ শৈবসিদ্ধান্ত মতে, উক্ত শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান উপাস্য দেবতা পঞ্চানন (পাঁচ মাথা-বিশিষ্ট) ও দশভূজ (দশ হাত-বিশিষ্ট) সদাশিব প্রতিষ্ঠা ও পূজার আদর্শ উপাদান হল শিবলিঙ্গ.
মনিয়ার উইলিয়ামস তাঁর ব্রাহ্মণইজম্ অ্যান্ড হিন্দুইজম্ বইয়ে লিখেছেন, "লিঙ্গ" প্রতীকটি "শৈবদের মনে কোনো অশালীন ধারণা বা যৌন প্রণয়াকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয় না. অন্যদিকে এন. রামচন্দ্র ভট্ট প্রমুখ গবেষকেরা মনে করেন, পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গটি অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের রচনা.এম. কে. ভি. নারায়ণ শিবলিঙ্গকে শিবের মানবসদৃশ মূর্তিগুলি থেকে পৃথক করেছেন. তিনি বৈদিক সাহিত্যে লিঙ্গপূজার অনুপস্থিতির কথা বলেছেন এবং এর যৌনাঙ্গের অনুষঙ্গটিকে তান্ত্রিকসূত্র থেকে আগত বলে মত প্রকাশ করেছেন.
1900 সালে প্যারিস ধর্মীয় ইতিহাস কংগ্রেসে রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য ভারত সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, শিবলিঙ্গ ধারণাটি এসেছে বৈদিক যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ ধারণা থেকে. 1900 সালে প্যরিসে হয়ে যাওয়া ধর্মসমূহের ঐতিহাসিক মূল শীর্ষক সম্মেলনে বিশ্ববাসীর সামনে অথর্ববেদের স্কম্ভসুক্তের সাহায্যে তুলে ধরেন যে শিবলিঙ্গ মূলত বিশ্বব্রহ্মান্ডের ই প্রতীক.যূপস্তম্ভ বা স্কম্ভ হল বলিদানের হাঁড়িকাঠ. এটিকে অনন্ত ব্রহ্মের একটি প্রতীক মনে করা হত.জার্মান প্রাচ্যতত্ত্ববিদ গুস্তাভ ওপার্ট শালগ্রাম শিলা ও শিবলিঙ্গের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে তাঁর গবেষণাপত্রে এগুলিকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গে সৃষ্ট প্রতীক বলে উল্লেখ করে তা পাঠ করলে, তারই প্রতিক্রিয়ায় বিবেকানন্দ এই কথা বলেছিলেন.বিবেকানন্দ বলেছিলেন, শালগ্রাম শিলাকে পুরুষাঙ্গের অনুষঙ্গ বলাটা এক কাল্পনিক আবিষ্কার মাত্র. তিনি আরও বলেছিলেন, শিবলিঙ্গর সঙ্গে পুরুষাঙ্গের যোগ বৌদ্ধধর্মের পতনের পর আগত ভারতের অন্ধকার যুগে কিছু অশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তির মস্তিস্কপ্রসূত গল্প.
স্বামী শিবানন্দও শিবলিঙ্গকে যৌনাঙ্গের প্রতীক বলে স্বীকার করেননি.স্বামী শিবানন্দ বলেন, "এটি শুধু ভূল ই নয় বরং অন্ধ অভিযোগ ও বটে যে শিবলিঙ্গ পুরুষলিঙ্গের প্রতিনিধিত্বকারী." তিনি লিঙ্গপুরানের নিম্নলিখিত শ্লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন-
"প্রধানাম প্রকৃতির যদাধুর লিঙ্গমুত্তমম গান্ধবর্নরসাহৃনম শব্দ স্পর্শাদি বর্জিতম"
অর্থাত্ লিঙ্গ হল প্রকৃতির সর্বোচ্চ প্রকাশক যা স্পর্শ, বর্ন, গন্ধহীন.

1840 সালে এইচ. এইচ. উইলসন একই কথা বলেছিলেন.ঔপন্যাসিক ক্রিস্টোফার ইসারউড লিঙ্গকে যৌন প্রতীক মানতে চাননি.ব্রিটানিকা এনসাইক্লোপিডিয়ায় "শিবলিঙ্গের" ভুক্তিতেও শিবলিঙ্গকে যৌন প্রতীক বলা হয়নি.
মার্কিন ধর্মীয় ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ওয়েনডি ডনিগারের মতে,
হিন্দুদের পটভূমিতে পুংজননেন্দ্রি়, আদিরূপ যা তাদের নিজস্ব penises বহিঃপ্রকাশ (যদি আমি তার Eliadean, প্রকৃতপক্ষে Bastianian মধ্যে শব্দ, এবং অ Jungian অর্থে ব্যবহার করতে পারেন), পুংজননেন্দ্রি় দেবতার (শিবলিঙ্গের বলা হয়) হয় শিব, যারা ইন্দ্র (ও'ফ্লাহের্তি তে, 1973) এর পুরাণের অনেক উত্তরাধিকারী. শিবলিঙ্গের হাজির, শিবের শরীর থেকে পৃথক বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপর ... এই অনুষ্ঠান প্রতিটি উপর, Sivas ক্রোধ শান্ত ছিল যখন দেবতা ও মানুষের চিরকালের পর তার শিবলিঙ্গের উপাসনা করার প্রতিশ্রুতি, যা, ভারতে তারা এখনও না. হিন্দু, উদাহরণস্বরূপ, তর্ক হবে শিবলিঙ্গের সবটা কিছুই পুরুষ যৌন অঙ্গ, একটি বিবৃতি ক্রমেই অজ্ঞতা উপাদান দ্বারা অসঙ্গতি সঙ্গে কি আছে যে.
যদিও অধ্যাপক ডনিগার পরবর্তীকালে তাঁর দ্য হিন্দুজ: অ্যান অল্টারনেটিভ হিস্ট্রি বইতে তাঁর বক্তব্য পরিষ্কার করে লিখেছেন. তিনি বলেছেন, কোনো কোনো ধর্মশাস্ত্রে শিবলিঙ্গকে ঈশ্বরের বিমূর্ত প্রতীক বা দিব্য আলোকস্তম্ভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে. এই সব বইতে লিঙ্গের কোনো যৌন অনুষঙ্গ নেই.
হেলেন ব্রুনারের মতে, লিঙ্গের সামনে যে রেখাটি আঁকা হয়, তা পুরুষাঙ্গের গ্ল্যান্স অংশের একটি শৈল্পিক অনুকল্প. এই রেখাটি আঁকার পদ্ধতি মধ্যযুগে লেখা মন্দির প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত অনুশাসন এবং আধুনিক ধর্মগ্রন্থেও পাওয়া যায়. প্রতিষ্ঠাপদ্ধতির কিছু কিছু প্রথার সঙ্গে যৌন মিলনের অনুষঙ্গ লক্ষ্য করা যায়. যদিও গবেষক এস. এন. বালগঙ্গাধর লিঙ্গের যৌন অর্থটি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেছেন.
এ লেখাটা লিখেছি সনাতনীদের জন্য. যারা শিব লিঙ্গ কি তা জানেন না অথবা ভুল জেনে লজ্জিত হন.যারা সর্বদা হিন্দু ধর্মের ছিদ্রান্বেষী তাদের জন্য না কারন ওরা জেগে জেগে ঘুমাতে পছন্দ করে. তবে যারা উদ্দেশ্য মুলক ভাবে শিব লিঙ্গকে অশালীন বলতে চায় তাদের জন্য বলতে চাই দিবা নিশি যে যা ভাবে সব কিছুর ভিতরে তারই প্রতিরূপ খুজে পাবে; এটাই স্বাভাবিক

No comments:

Post a Comment