কালীপূজা বা শ্যামাপূজা হল দেবী কালীর পূজাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত একটি উৎসব। বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এই উৎসব উপলক্ষ্যে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষিত হয়। বাংলায় গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়ে থাকে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত সাংবাৎসরিক দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই দিন আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা রাত্রিব্যাপী কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, দীপান্বিতা কালীপূজার দিনটিতে ভারতের অন্যান্য জায়গায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই দিন লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালি, অসমীয়া ও ওড়িয়ারা এই দিন কালীপূজা করে থাকেন। এছাড়া মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে ফলহারিণী কালীপূজাও যথেষ্ট জনপ্রিয়।
চামুণ্ডাচর্চিকা কালীর পূজা বাংলা ও বহির্বঙ্গে প্রাচীন উৎসব হলেও বর্তমান আকারে কালীপূজা আধুনিক কালের। ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত তথা নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপূজার বিধান দিলেও, কালীপূজার উল্লেখ করেননি। ১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, “কাশীনাথ এই গ্রন্থে কালীপূজার পক্ষে যে ভাবে যুক্তিতর্কের অবতারণা করিয়াছেন, তাহা দেখিলেই মনে হয়, কালীপূজা তখনও পর্যন্ত বাঙলা দেশে সুগৃহীত ছিল না।” তবে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলায় কালীপূজার প্রচলনের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রটাটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বয়ং কালীমূর্তি গড়িয়া পূজা করিতেন। আগমবাগীশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বাঙ্গালার সাধক সমাজ অনেকদিন চলেন নাই; লোকে ‘আগমবাগিশী’ কাণ্ড বলিয়া তাঁহার পদ্ধতিকে উপেক্ষা করিত।” অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়াররাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এই সময় রামপ্রসাদ সেনও আগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব।
দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
কোনো কোনো মণ্ডপে কালী ও শিবের মূর্তির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার দুই বিখ্যাত কালীসাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস ও বামাখ্যাপার মূর্তিও পূজিত হয়। কোথাও কোথাও কালীর সঙ্গে সঙ্গে দশমহাবিদ্যাও পূজিত হন। দর্শনার্থীরা সারারাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে কালীপ্রতিমা দর্শন করেন। কালীপূজার রাতে গৃহে আলোকসজ্জা সাজানো হয় এবং আতসবাজি পোড়ানো হয়।
কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে এই দিন দেবী কালীকে লক্ষ্মীরূপে পূজা করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত এই দিন কালীঘাট মন্দিরে ভিড় করেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে বলি উৎসর্গ করেন। কলকাতার অপর বিখ্যাত কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও কালীপূজা উপলক্ষ্যে মহাসমারোহ হয়। এইখানেই অতীতে রামকৃষ্ণ পরমহংস কালী আরাধনা করেছিলেন।
কালীপূজা কালীপূজা বা শ্যামাপূজা হল দেবী কালীর পূজাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত একটি উৎসব। বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এই উৎসব উপলক্ষ্যে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষিত হয়। বাংলায় গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়ে থাকে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত সাংবাৎসরিক দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই দিন আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা রাত্রিব্যাপী কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, দীপান্বিতা কালীপূজার দিনটিতে ভারতের অন্যান্য জায়গায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই দিন লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালি, অসমীয়া ও ওড়িয়ারা এই দিন কালীপূজা করে থাকেন। এছাড়া মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে ফলহারিণী কালীপূজাও যথেষ্ট জনপ্রিয়। চামুণ্ডাচর্চিকা কালীর পূজা বাংলা ও বহির্বঙ্গে প্রাচীন উৎসব হলেও বর্তমান আকারে কালীপূজা আধুনিক কালের। ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত তথা নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপূজার বিধান দিলেও, কালীপূজার উল্লেখ করেননি। ১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, “কাশীনাথ এই গ্রন্থে কালীপূজার পক্ষে যে ভাবে যুক্তিতর্কের অবতারণা করিয়াছেন, তাহা দেখিলেই মনে হয়, কালীপূজা তখনও পর্যন্ত বাঙলা দেশে সুগৃহীত ছিল না।” তবে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলায় কালীপূজার প্রচলনের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রটাটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বয়ং কালীমূর্তি গড়িয়া পূজা করিতেন। আগমবাগীশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বাঙ্গালার সাধক সমাজ অনেকদিন চলেন নাই; লোকে ‘আগমবাগিশী’ কাণ্ড বলিয়া তাঁহার পদ্ধতিকে উপেক্ষা করিত।” অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়াররাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এই সময় রামপ্রসাদ সেনও আগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব। দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কোনো কোনো মণ্ডপে কালী ও শিবের মূর্তির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার দুই বিখ্যাত কালীসাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস ও বামাখ্যাপার মূর্তিও পূজিত হয়। কোথাও কোথাও কালীর সঙ্গে সঙ্গে দশমহাবিদ্যাও পূজিত হন। দর্শনার্থীরা সারারাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে কালীপ্রতিমা দর্শন করেন। কালীপূজার রাতে গৃহে আলোকসজ্জা সাজানো হয় এবং আতসবাজি পোড়ানো হয়। কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে এই দিন দেবী কালীকে লক্ষ্মীরূপে পূজা করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত এই দিন কালীঘাট মন্দিরে ভিড় করেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে বলি উৎসর্গ করেন। কলকাতার অপর বিখ্যাত কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও কালীপূজা উপলক্ষ্যে মহাসমারোহ হয়। এইখানেই অতীতে রামকৃষ্ণ পরমহংস কালী আরাধনা করেছিলেন। হিন্দু ধর্ম প্রচার সংঘ
চামুণ্ডাচর্চিকা কালীর পূজা বাংলা ও বহির্বঙ্গে প্রাচীন উৎসব হলেও বর্তমান আকারে কালীপূজা আধুনিক কালের। ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত তথা নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপূজার বিধান দিলেও, কালীপূজার উল্লেখ করেননি। ১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, “কাশীনাথ এই গ্রন্থে কালীপূজার পক্ষে যে ভাবে যুক্তিতর্কের অবতারণা করিয়াছেন, তাহা দেখিলেই মনে হয়, কালীপূজা তখনও পর্যন্ত বাঙলা দেশে সুগৃহীত ছিল না।” তবে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলায় কালীপূজার প্রচলনের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রটাটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বয়ং কালীমূর্তি গড়িয়া পূজা করিতেন। আগমবাগীশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বাঙ্গালার সাধক সমাজ অনেকদিন চলেন নাই; লোকে ‘আগমবাগিশী’ কাণ্ড বলিয়া তাঁহার পদ্ধতিকে উপেক্ষা করিত।” অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়াররাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এই সময় রামপ্রসাদ সেনও আগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব।
দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
কোনো কোনো মণ্ডপে কালী ও শিবের মূর্তির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার দুই বিখ্যাত কালীসাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস ও বামাখ্যাপার মূর্তিও পূজিত হয়। কোথাও কোথাও কালীর সঙ্গে সঙ্গে দশমহাবিদ্যাও পূজিত হন। দর্শনার্থীরা সারারাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে কালীপ্রতিমা দর্শন করেন। কালীপূজার রাতে গৃহে আলোকসজ্জা সাজানো হয় এবং আতসবাজি পোড়ানো হয়।
কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে এই দিন দেবী কালীকে লক্ষ্মীরূপে পূজা করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত এই দিন কালীঘাট মন্দিরে ভিড় করেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে বলি উৎসর্গ করেন। কলকাতার অপর বিখ্যাত কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও কালীপূজা উপলক্ষ্যে মহাসমারোহ হয়। এইখানেই অতীতে রামকৃষ্ণ পরমহংস কালী আরাধনা করেছিলেন।
কালীপূজা কালীপূজা বা শ্যামাপূজা হল দেবী কালীর পূজাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত একটি উৎসব। বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এই উৎসব উপলক্ষ্যে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষিত হয়। বাংলায় গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়ে থাকে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে অনুষ্ঠিত সাংবাৎসরিক দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই দিন আলোকসজ্জা ও আতসবাজির উৎসবের মধ্য দিয়ে সারা রাত্রিব্যাপী কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, দীপান্বিতা কালীপূজার দিনটিতে ভারতের অন্যান্য জায়গায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই দিন লক্ষ্মীপূজা অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালি, অসমীয়া ও ওড়িয়ারা এই দিন কালীপূজা করে থাকেন। এছাড়া মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে ফলহারিণী কালীপূজাও যথেষ্ট জনপ্রিয়। চামুণ্ডাচর্চিকা কালীর পূজা বাংলা ও বহির্বঙ্গে প্রাচীন উৎসব হলেও বর্তমান আকারে কালীপূজা আধুনিক কালের। ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত তথা নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপূজার বিধান দিলেও, কালীপূজার উল্লেখ করেননি। ১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। ডঃ শশীভূষণ দাশগুপ্তের মতে, “কাশীনাথ এই গ্রন্থে কালীপূজার পক্ষে যে ভাবে যুক্তিতর্কের অবতারণা করিয়াছেন, তাহা দেখিলেই মনে হয়, কালীপূজা তখনও পর্যন্ত বাঙলা দেশে সুগৃহীত ছিল না।” তবে খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলায় কালীপূজার প্রচলনের কিছু কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। নবদ্বীপের প্রথিতযশা তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। তাঁর পূর্বে কালী উপাসকগণ তাম্রটাটে ইষ্টদেবীর যন্ত্র এঁকে বা খোদাই করে পূজা করতেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বয়ং কালীমূর্তি গড়িয়া পূজা করিতেন। আগমবাগীশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিয়া বাঙ্গালার সাধক সমাজ অনেকদিন চলেন নাই; লোকে ‘আগমবাগিশী’ কাণ্ড বলিয়া তাঁহার পদ্ধতিকে উপেক্ষা করিত।” অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদিয়াররাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কালীপূজাকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এই সময় রামপ্রসাদ সেনও আগমবাগীশের পদ্ধতি অনুসারে কালীপূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্র ও বাংলার ধনী জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কালীপূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে কালীপূজা বাংলায় দুর্গাপূজার মতোই এক বিরাট উৎসব। দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে কলকাতা সহ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কোনো কোনো মণ্ডপে কালী ও শিবের মূর্তির সঙ্গে সঙ্গে বাংলার দুই বিখ্যাত কালীসাধক রামকৃষ্ণ পরমহংস ও বামাখ্যাপার মূর্তিও পূজিত হয়। কোথাও কোথাও কালীর সঙ্গে সঙ্গে দশমহাবিদ্যাও পূজিত হন। দর্শনার্থীরা সারারাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে কালীপ্রতিমা দর্শন করেন। কালীপূজার রাতে গৃহে আলোকসজ্জা সাজানো হয় এবং আতসবাজি পোড়ানো হয়। কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে এই দিন দেবী কালীকে লক্ষ্মীরূপে পূজা করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত এই দিন কালীঘাট মন্দিরে ভিড় করেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে বলি উৎসর্গ করেন। কলকাতার অপর বিখ্যাত কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতেও কালীপূজা উপলক্ষ্যে মহাসমারোহ হয়। এইখানেই অতীতে রামকৃষ্ণ পরমহংস কালী আরাধনা করেছিলেন। হিন্দু ধর্ম প্রচার সংঘ
No comments:
Post a Comment