যারা দাবী করে বাবা
মায়ের মুখাগ্নির দৃশ্য সহ্য করতে
না পেরে হিন্দুধর্ম ত্যাগ
করেছে মুলত এই টাইপের
অনেক
কথা বিভিন্ন ওয়াজে বা বন্ধুমহলে
শোনা যায় যে, এক
ছেলে, তার বাবা/মা
কে চিতায় পুড়তে দেখে
হিন্দুধর্মের নৃসংসতা সহ্য করতে না
পেরে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করেছে।
আসলে হাস্যকর কথা হলো, ব্যাবহৃত
এই লজিকের কোন উপযুক্ত
প্রমান বা পাত্র আজ
পর্যন্ত কেউই
দেখাতে
পারেনি। এমনকি
দেলোয়ার হোসেন সাঈদির ওয়াজে
হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়ার
যে ভিডিও প্রচার করা
হতো, সেটাও
যে সম্পুর্ণ ভুয়া তা প্রমান
করেছে গোয়েন্দা বাহিনী। তারা
খোজ নিয়ে দেখেছে যে
উক্ত ব্যাক্তিদের বাংলাদেশের
প্রতান্ত
অঞ্চল থেকে টাকার বিনিময়ে
ভাড়া করে আনা হতো,
এবং ওয়াজ চলাকালীন তারা
কাঁদতে কাঁদতে ষ্টেজে উঠে
জিন্দাপীর
দেলোয়ার
সাঈদির নিকট হতে ইসলাম
গ্রহনের নাটক করতো।
এমনও অনেক মাহাত্ম্যকথা প্রচলিত
আছে যে অমুক লোক
হঠাৎ করেই ব্যাকুল প্রেমে
আকুল হয়ে কাম সারাই
ফেলছে। মুলত
এই ঘটনাগুলো হলে ধর্মান্তরের জন্য
সহায়ক পুজি।যাকে
ব্যাবহার করে নিরিহ এবং
সরল মানুষদের মাথায় ধর্মের বোম
ব্লাষ্ট করানো হয়।
কিন্তু আগুনে মৃত দেহ
সৎকার কেন? অনেকে শুনলে
অবাক হয় যে হিন্দুদের
মধ্যেও কবর দেয়ার প্রথা
আছে। সৎকার
কল্পে আগুনে সৎকার, জলে
বিসর্জন, মাটি চাপা দেয়া
ইত্যাদি । এমনকি
ইসলাম ধর্মে ৩ প্রকার
সৎকারের বিধান আছে, যথা
১)মাটি চাপা দেয়া
২)পানিতে ভাসিয়ে দেয়া
এবং ৩) আগুনে সৎকার
করা। কিন্তু
সর্বোৎকৃষ্ট ভাবে কবর দেয়াকে
প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
সম্ভবত হযরত ওমর এর
সময় সারা আরবে কবর
দেয়াকে প্রধান সৎকার রুপে
প্রাধান্য দেয়া হয়।
হিন্দুধর্মে আগুনে পোড়ানোর ক্ষেত্রে
মনুসংহিতা এবং পরশুরাম সুক্তে
কয়েকটি যুক্তি দেখানো হয়েছে
l
১)মৃত কে মাটিকে
প্রোথিত করার চেয়ে আগুনে
সৎকার করা উত্তম।
এতে আত্মা সরাসরি জাগতিক
বন্ধন অতিক্রম করতে পারে
২)প্রাচ্যে বহুবিধ মহাত্মাগন সাধনা
বলে অনেক বছর বেচে
থাকতে চাইতেন, সেজন্য তারা শবদাহের
জন্য অপেক্ষমান দেহ, মাটিতে প্রোথিত
দেহে নিজদের আত্মার স্থানান্তর
করে সেই দেহে প্রবেশ
করতেন (যেমন শংকর আচার্য,
তিনি সংসার শাস্ত্রের সাম্যক
জ্ঞ্যান নিতে মৃত রাজার
শরীরে প্রবেশ করেছিলেন)
৩) বহুহামী সংসার বদ্ধ মানুষ
মৃত্যুর সময়ও বিষয়াসক্ত থাকে,
ফলে তার মৃত্যুর পরেও
তার আত্মা দুখিত হয়ে
ইতস্তত বিচরণ করে থাকে,
সেখেত্রে এই ধরনের বিষয়াসক্ত
আত্মার দেহ যদি দাহ
না থেকে জলে ভাসমান,
মাটিতে প্রোথিত থাকে, তবে সে
পুনরায় সেই দেহ প্রবেশ
করে নগর ও মানুশের
ক্ষতি সাধন করে।
সনাতন
ধর্ম সর্বদা সৃষ্টির শুরু
থেকেই বিজ্ঞান এবং পরিবেশ নির্ভর,
যার প্রমান পাওয়া যায়
পরশুরাম সুক্ত।সেখানে
নগর সভায় বলা হয়েছে
'"জগতের বায়ু সকলকে সুস্থ
এবং জীবনধারনের উপযোগী করতে নগরবাসীগন
মৃত দেহের পুর্ন সৎকার
স্বরুপ তাকে শাস্ত্রবিধি মেনে
দাহ করুন। কিন্তু
তাকে জলে ভাসাবেন না
বা মাটিতে প্রোথিত করবেন
না, এতে জল এবং
বায়ু মারাত্বক দুষিত হয়।
আর যে মৃত্তিকায় আমরা
ফসল উতপন্ন করি, সেখানে
মৃতদের প্রোথিত করো না।গবাদি পশুর জন্য
ভাগার ব্যাবহার করুন।
এছাড়াও
শব দাহ মানে, শব
কে আগুনে কাবাব বানানো
নয়। একমাত্র
যারা বংশানুক্রম গত ডোম এবং
যেসমস্ত ব্রাম্মন শবদাহের সাথে যুক্ত, তাদের
কাছ থেকে জানতে পারবেন,
প্রতিটি মুহুর্তে বেদ মন্ত্র কিভাবে
উচ্চারিত হয়।যার
প্রতিটি অর্থ দাড়ায় "ক্ষমা
করো, তোমার সন্তানকে, তাকে
অমৃতলোকে নিয়ে যাও।
এছাড়াও মুখাগ্নির ব্যাপারটাও কিন্তু মন্ত্রময়, যেখানে
সন্তান বেদের গম্ভীরতর মন্ত্রের
মাধ্যমে পরলোকগত পিতামাতার আত্মার পুর্ন শান্তি
কামনা করে। আর
গৃহ হতে শব দেহ
বের হয়ে শশ্বানে যাবার
আগ পর্যন্ত, যে গীতা পাঠ,
কীর্তন করা হয় তার
আত্মার শান্তির জন্য অন্যদের যে
প্রচেষ্টা থাকে, সারা দুনিয়ায়
এমন কোন ধর্ম নেই,
যেখানে এভাবে মৃতের জন্য
শেষ যাত্রা অবধি হরিনাম,
গীতা পাঠের মাধ্যমে তার
শান্তির জন্য অন্যদের আপ্রান
চেষ্টা থাকে। সেই
সাথে তার পুর্ন শান্তির
জন্য প্রভৃতি দান, সংকল্প এবং
তিল তর্পনের কথা বাদই দিলাম।
তাই গর্বিত হোন নিজের
ধর্মের জন্য। অন্যের
কথায় কান দেবেন না
* * * * *
No comments:
Post a Comment