Wednesday, March 15, 2017

দোল বা হোলি উৎসব

দৈত্যরাজ হিরণ্যকিশপুর কাহিনিআমরা অনেকেই জানি.ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক
ছিলেন. তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুলে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন.

কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না. কিন্ত অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ড থেকেও অক্ষত থেকে যায় আর ক্ষমতার অপব্যবহারে হোলিকার বর নষ্ট হয়ে যায় এবং হোলিকা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, এই থেকেই হোলি কথাটির উৎপত্তি.

অন্যদিকে বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন. কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে.
অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর
সকলে আনন্দ করে. এই অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহাআনন্দে পরিণত হয়. অঞ্চল ভেদে হোলি বা দোল উদযাপনের ভিন্ন ব্যাখ্যা কিংবা এর সঙ্গে সংপৃক্ত লোককথার ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্ত উদযাপনের রীতি এক.



বাংলায় আমরা বলি 'দোলযাত্রা' আর পশ্চিম
ও মধ্যভারতে 'হোলি'.রঙ উৎসবের আগের দিন
'হোলিকা দহন' হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে. শুকনো
গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে
থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা থাম বানিয়ে তাতে
অগ্নি সংযোগ করে 'হোলিকা দহন' হয়. পরের দিন রঙ
খেলা. বাংলাতেও দোলের
আগের দিন এইরকম হয় যদিও তার ব্যাপকতা কম
আমরা বলি 'চাঁচর'. এই চাঁচরেরও অন্যরকম ব্যাখ্যা আছে. দোল আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব.

হিন্দু ধর্ম অনুসারে চারটি যুগ-সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ,
দ্বাপরযুগ এবং কলিযুগ. বর্তমানে চলছে কলিযুগ. এর
আগের দ্বাপরযুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা বা দোল উৎসব চলে আসছে. বলা হয়, শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে ফাল্গুনী পূর্ণিমায়. আবার 1486 সালের এই পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেন বলে একে গৌর-পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করেন বৈষ্ণব বিশ্বাসীরা.

তবে এর মূল তাৎপর্য :::
রাধা-কৃষ্ণের সম্পর্কের উপাখ্যানে. ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথির এ দিনে বৃন্দাবনের নন্দন কাননে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে তাঁর সখী রাধা ও তেত্রিশ হাজার গোপীর সঙ্গে রঙ ছোড়াছুড়ির খেলায় মেতে ছিলেন. এর স্মরণে এ দিন সকালে ভগবানকৃষ্ণ ও রাধার বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নান করিয়ে দোলায় চড়িয়ে কীর্তন গান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়. এরপর কৃষ্ণভক্তরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রঙ খেলেন. এসব দিক থেকে দোল উৎসবকে দুইভাবে
দেখা যায়-
হিন্দুধর্মের পৌরাণিক উপাখ্যান ও শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব.

আর এভাবেই আমরা বছরের পর বছর অতিক্রম করে চলেছি 'দোল' উৎসব আর শ্রীমান মহাপ্রভুর জন্মতিথি বা গৌরপূর্ণিমা হিসাবে. পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দঘন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীরাধার চরণকমলে সবার মঙ্গলময়, কল্যাণময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় জীবনের প্রার্থনা আমাদের.

3 comments:

  1. শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে

    ReplyDelete
  2. শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব --হবে না দোল পূর্ণিমা তিথিতে

    ReplyDelete
  3. কৃষ্ণের আবির্ভাব- এটা ঠিক করুন

    ReplyDelete